বুধবার

৭ মে, ২০২৫
২৩ বৈশাখ, ১৪৩২
৯ জিলক্বদ, ১৪৪৬

আপন দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা মামলার ১৫ আসামির জামিন, বাদীপক্ষের শঙ্কা-অসন্তোষ

প্রতিনিধি,কুষ্টিয়া

প্রকাশিত: ৬ মে, ২০২৫ ২২:৩৫

শেয়ার

আপন দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা মামলার ১৫ আসামির জামিন, বাদীপক্ষের শঙ্কা-অসন্তোষ
ছবি : বাংলা এডিশন
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে প্রকাশ্যে দিবালোকে আপন দুই ভাইকে নির্মম নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা মামলার ১৫ আসামিকে জামিন দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার  দুপুরের দিকে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ ছুমিয়া খানম তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। 
 
জামিন পাওয়ার পর কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতে উপস্থিত বাদীপক্ষের লোকজনকে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে জামিন হওয়া আসামিদের বিরুদ্ধে। ডাবল মার্ডার মামলার আসামিদের জামিন দেওয়ায় অসন্তোষ ও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাদীপক্ষের লোকজন। এছাড়া ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাদীপক্ষ। আসামিদের জামিন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তারা। 
হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়া ১৫ আসামি আজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এসময় আসামী পক্ষের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তাদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন। 
 
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৩০ অক্টোবর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার সাতারপাড়া গ্রামের বাজারে পূর্বশত্রুতা ও সামাজিক দ্বন্দ্বের জেরে আপন দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন। এ ঘটনায় আহত হয় বেশ কয়েকজন। তাদের মধ্যে দুজন এখনো গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। 
 
নিহতরা হলেন- দৌলতপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের সাতারপাড়া গ্রামের রমজান মণ্ডলের ছেলে হামিদ (৫০) ও নজরুল ইসলাম মন্ডল (৪৫)। নজরুল ব্যবসা করতেন আর হামিদ কৃষক।
এ ঘটনায় ২০২৪ সালের ২ নভেম্বর ৪৭ জনের নাম উল্লেখ করে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় আরও ৮-১০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এ মামলার ৭ আসামি কারাগারে রয়েছেন। 
 
এ বিষয়ে মামলার বাদী নিহত নজরুল ইসলামের ছেলে ও নিহত রমজান মণ্ডলের ভাতিজা সুরুজ আলী বলেন, সামাজিক দ্বন্দ্বের জেরে আসামিরা আমার চাচা ও বাবাকে নির্মম নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে। দৌলতপুরের সাতারপাড়া বাজারে প্রকাশ্যে দিবালোকে শতশত মানুষের চোখের সামনে আসামিরা আমার বাবা ও চাচাকে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিল চারজন। তাদের মধ্যে দুজন এখনো গুরুতর অসুস্থ রয়েছে। এমন মামলার ১৫ জন আসামিকে জামিন দিয়েছে আদালত। এদের জামিন হয় কিভাবে? ডাবল মার্ডার মামলার আসামিদের জামিন কেন দেয়া হয়েছে? এতে আমরা চরমভাবে অসন্তোষ। জামিন পাওয়ার পর আদালতেই বাদীপক্ষের লোকজনকে হত্যার হুমকি দিয়েছে আসামিরা। জামিন হওয়া আসামিরা পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছি। 
 
তিনি আরও বলেন, আমরা অনিরাপত্তায় ভুগছি, কারণ আসামিরা যেকোনো মুহূর্তে আমাদের উপর হামলা করতে পারে। তারা বিভিন্নভাবে আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করে, আমাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করে। জামিন হওয়া আসামিদের জামিন বাতিল করা হোক। তাদের আইনের আওতায় আনা হোক। একইসাথে দ্রুত বিচার কাজ শেষ করে খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। 
 
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিলের নিহতদের ভাতিজা আকবর ও আসমত আলী। তারা এখনো গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তারা বলেন, বিকাল বেলায় আমারা সাতারপাড়া বাজারে চা খাচ্ছিলাম। এসময় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে প্রতিপক্ষের লোকজন আমাদের উপরে হামলা করে। নির্মম নিশংসভাবে কুপিয়ে আমাদের দুই চাচাকে হত্যা করে। ঘটনাস্থলেই তারা দুজন মারা যায়। আমরা সহ বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়। এখনো পর্যন্ত আমরা দুজন খুব অসুস্থ। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছি। প্রকাশ্যে দিবালোকে দুইজনকে হত্যা করা খুনিদের জামিন দিয়েছে আদালত। জামিন হওয়ার পর আদালতেই আমাদের হত্যার হুমকি দিয়েছে আসামিরা। খুনিদের জামিন দেয়ায় আমরা অসন্তোষ। আমরা ভয়ের মধ্যে আছি। ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়েও শঙ্কার মধ্যে আছি। যেকোনো সময় আসামিরা আমাদের উপর হামলা করতে পারে। তাছাড়া তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারে। এজন্য তাদের জামিন বাতিল করা হোক। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক। আমরা আইনের উপর শ্রদ্ধাশীল। খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।  
 
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কুষ্টিয়া আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) খন্দকার সিরাজুল ইসলামকে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেন নি।  
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদী পক্ষের আইনজীবী বলেন, প্রকাশ্যে দিবালোকে আপন দুই ভাইকে নির্মম নৃশংসভাবে হত্যা করেছে আসামিরা। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে দুজন এখনো সুস্থ হয়নি। ডাবল মার্ডার মামলার ১৫ আসামিকে জামিন দিয়েছে আদালত। বাদীপক্ষ থেকে জামিনের বিরোধিতা করা হয়েছিল।
 
এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা বলেন, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 
 
banner close
banner close