
নদীতে নেই ইলিশ। জাল ফেললে উঠছে পাঙাসের পোনা, ছোট আকারের ট্যাংরা ও পোয়া। মাঝেমধ্যে ইলিশের পোনাও ধরা পড়ছে। যদিও ইলিশের পোনা বা জাটকাগুলোকে জেলেরা ও ব্যবসায়ীরা চাপিলা মাছ বলে বিক্রি করছেন। মার্চ-এপ্রিল দুই মাস নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে নেমে ইলিশ না পেয়ে হতাশায় পড়েছেন জেলেরা। এরমধ্যে নিষেধাজ্ঞাকালীন জেলেদেরকে ৮০ কেজি করে দুই দফায় ১৬০ কেজি ভিজিএফ’র চাল দেওয়ার কথা ছিল। প্রথমবার পেলেও দ্বিতীয় দফায় চাল দেওয়া হয়নি।
এদিকে নিষেধাজ্ঞাকালীন মাছ শিকার থেকে বিরত থাকতে চার মাসে (জানুয়ারি থেকে এপ্রিল) দুই মাসে দুই মেয়াদে ২৮ হাজার ৩৪৪ জন জেলেকে ১৬০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রথম দফায় ৪০ কেজি চাল দিলেও শনিবার (৩ মে) দুপুরে পর্যন্ত দ্বিতীয় মেয়াদের চাল পায়নি জেলেরা। এরমধ্যে ৩০ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়। ওইদিন সকাল থেকে নদীতে নেমে পড়ে জেলেরা। তবে মেঘনা নদীতে ইলিশের দেখা নেই। কারো কারো জালে দুই-একটি ইলিশ ধরা পড়লেও তা আকারে ছোট।
সদরের চররমনী গ্রামের জেলে ইব্রাহিম হোসেন, করাতিরহাট এলাকার বাদশা মিয়া, কমলনগরের ফলকন গ্রামের মো. সবুজ, নুরুল ইসলাম, নুরুল আলম, মাতাব্বরহাট এলাকার শরীফ মাঝি ও শফি উল্যার সঙ্গে কথা বললে তারা এসব তথ্য জানায়।
তারা আরও জানায়, মাছ শিকারি জেলেরা অন্য কাজ জানে না বললেই চলে। মাছ শিকারেই তাদের একমাত্র আয়ের উৎস্য। নিষেধাজ্ঞাকালীন সরকারের দেওয়া চালে তাদের সংসার চলে না। ধারদেনা আর দাদনদারদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তাদেরকে চলতে হয়। এবার নিষেধাজ্ঞাকালীন সময় ঢালাওভাবে মাছ শিকার হয়েছে। প্রশাসনের নজরদারি প্রথম অবস্থায় ছিল না। শেষ মুহুর্তে এসে কিছু অভিযান দিয়েছে কমলনগরে। তবে রামগতি, সদর ও রায়পুরে অভিযানের খবর তেমন শোনা যায়নি। এখন নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে নেমেই হতাশায় পড়তে হয়েছে জেলেদের। ইলিশের দেখা নেই। পাঙাসের পোনা, ট্যাংরা আর পোয়া মাছ বিক্রি করে খরচ উঠে না। ৭-৮ হাজার টাকা খরচ করে নদীতে জাল ফেললে ২-৩ হাজার টাকার মাছ ধরা পড়ে। কয়েকজন জেলেকে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে ডাঙায়। এতে লোকসান গুণতে হচ্ছে সবাইকে।
অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এবার জেলেরা মাছ শিকারে নিয়োজিত ছিল। ফলে জাটকা সংরক্ষণ অভিযান এবার পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।
কমলনগর উপজেলার মাতাব্বরহাট ও লুধুয়া মাছঘাট ঘুরে দেখা যায়, ঘাটে ইলিশের দেখা নেই। জেলেরা নদী থেকে নিয়ে আসছেন ছোটা আকারের পোয়া, পাঙাসের পোনা, ইলিশের পোনা (চাপিলা)। এতে ঘাটে বেচাবিক্রির হাকডাক নেই। দীর্ঘ বিরতির পর ঘাটে উৎসব থাকলেও পুরোটাই ছিল নিরব।
অন্যদিকে অভয়াশ্রমে জাটকা সংরক্ষণে নিষেধাজ্ঞার দুই মাসে ২৭৬টি অভিযান পরিচালনা করেছে মৎস্য বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে ৩২ টি মামলায় ৯৪ জন জেলেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দিয়ে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। অভিযানগুলোতে ২০ লাখ মিটার জাল, ৬৪ টি মাছ শিকারী নৌকা ও দেড় টন মাছ জব্দ করা হয়। মাছগুলো এতিমখানাসহ অসহায়দের মাঝে বিতরণ করা হয়। এছাড়া জালগুলো পুড়িয়ে বিনষ্ট করেছে প্রশাসন।
তবে অভিযান শতভাগ সফল দাবি করে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, জাটকা ধরা পড়ে নদীর এমন এলাকায় মৎস্যবিভাগের নজরদারি ও অভিযান কঠোর ছিল। বিশাল নদীতে নজরদারির বিষয়ে লোকবলের স্বল্পতা রয়েছে। তবুও আমরা শতভাগ সফল হয়েছি। নদীতে পানি বেশি, আবহাওয়াও খারাপ রয়েছে। খুব শিগগিরই জেলেদের জালে নদীতে কাঙ্খিত ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশাবাদি তিনি।
তিনি আরও বলেন, প্রথম দফায় ৮০ কেজি করে জেলেদেরকে চাল দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় দফার চাল এখনো দেওয়া হয়নি। চাল বরাদ্দ আসেনি। বিগত সময়ে নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়েই বরাদ্দের চাল চলে আসে। এবার কি কারণে আসেনি তা বলতে পারেননি তিনি।
আরও পড়ুন: