
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার সোনারাম পূর্বপাড়া গ্রামে কথিত ‘আয়না ঘর’ নামক এক বন্দিশালায় ছয় মাস ধরে আটক থাকা দুই ব্যক্তি-একজন গৃহবধূ এবং একজন বৃদ্ধ-শুক্রবার ভোরে পালিয়ে এসে এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন। ঘটনায় পল্লি চিকিৎসক আরাফাতকে আটক করেছে পুলিশ, এবং সন্দেহভাজন আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া দুজন হলেন, লক্ষীবিষ্ণুপ্রসাদ গ্রামের মুনসুর আলীর স্ত্রী শিল্পী খাতুন (৪৫) এবং পূর্বপাইকড়া গ্রামের মৃত রুস্তম শেখের ছেলে আব্দুল জুব্বার (৬৮)। স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরে একটি সংঘবদ্ধ চক্র সাধারণ মানুষকে অপহরণ করে এই ‘আয়না ঘর’ বন্দিশালায় আটকে রাখত এবং চাঁদা আদায়, কিডনি বিক্রি ও জমি লিখে নেওয়ার মতো গুরুতর অপরাধে লিপ্ত ছিল।
জানা যায়, বন্দিশালাটি ছিল সোনারাম পূর্বপাড়া গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে সুমনের বাড়ির আন্ডারগ্রাউন্ডে অবস্থিত। ওই চক্রের সদস্যরা ঘরের নিচে একটি বিশেষ কক্ষ তৈরি করে সেখানে অপহৃতদের আটকে রাখত। শিল্পী ও জুব্বার দীর্ঘ ছয় মাস অত্যাচারের শিকার হন বলে জানিয়েছেন। পরে তাঁরা বন্দিশালার মাটি খুঁড়ে তৈরি করা একটি সুরঙ্গপথ দিয়ে পালিয়ে আসেন এবং আশেপাশের লোকজনকে পুরো ঘটনার বিবরণ দেন।
মুক্তির খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে পল্লি চিকিৎসক আরাফাতের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস উপস্থিত হলেও বিক্ষুব্ধ জনতা বাধা দেয়। পরে পুলিশি সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
রায়গঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, আটককৃত আরাফাতকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মোঃ ফারুক হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পুরো এলাকাজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার বলেন, "এটি আসলে আয়না ঘর কি না তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি তদন্তাধীন এবং প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
এ ঘটনায় এলাকাবাসী গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং দ্রুত সব অপরাধীকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: