বৃহস্পতিবার

১ মে, ২০২৫
১৮ বৈশাখ, ১৪৩২
৩ জিলক্বদ, ১৪৪৬

ঘুষের বিনিময়ে চলছে মাদক ব্যবসা: সিরাজগঞ্জ ডিএনসি কর্মকর্তার বিকাশে মাসিক লেনদেনের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১ মে, ২০২৫ ১২:০০

শেয়ার

ঘুষের বিনিময়ে চলছে মাদক ব্যবসা: সিরাজগঞ্জ ডিএনসি কর্মকর্তার বিকাশে মাসিক লেনদেনের অভিযোগ
ডিএনসি কর্মকর্তার ।
সিরাজগঞ্জে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নির্বিঘ্নে চলছে মাদক ব্যবসা—এমন বিস্ফোরক অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, জেলার মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে শুরু করে লাইসেন্সধারী মাদক নিরাময় কেন্দ্র ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিমাসে মোটা অঙ্কের অর্থ বিকাশের মাধ্যমে উপ-পরিচালক (ডিডি) মো. রুহুল আমিনের ব্যক্তিগত নম্বরে পাঠিয়ে থাকেন।
 
সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে রাখার বদলে ঘুষের বিনিময়ে ব্যবসার পথ সুগম করে দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ডিডির নিজস্ব বিকাশ নম্বরে প্রতিমাসে লেনদেনের একটি তালিকা এখন প্রতিবেদকের হাতে, যা থেকেই বেরিয়ে এসেছে একের পর এক তথ্য।
 
মহাসড়কে তল্লাশি, লুটপাটের অভিযোগ
 
ডিএনসির ‘অভিযান’ চালানোর নামে মহাসড়কে সোর্সদের দিয়ে চলে তল্লাশি। এ সময় যাত্রীদের কাছ থেকে লুট করা হয় মোবাইল ফোন, টাকা-পয়সা ও মূল্যবান সামগ্রী। এ নিয়ে কিছু গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর তদন্ত শুরু করে ডিএনসির প্রধান কার্যালয়। কিন্তু তাতেও থেমে নেই অবৈধ লেনদেন ও দুর্নীতি।
 
বিকাশ লেনদেনে সরাসরি স্বীকারোক্তি
 
বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এসব লেনদেনের কথা স্বীকার করেছেন।
 
প্রদীপ কুমার, ম্যানেজার, বগুড়া ফরেন লিকার:
“স্যারকে আমরা প্রতিমাসে খুশি হয়ে এটা দেই।”
 
সবুজ আহমেদ, মাদক ব্যবসায়ী (ঘোষগাঁতী, উল্লাপাড়া):
“স্যার একবার মাছ কিনেছিলেন, পচা বের হয়েছিল। আমি টাকা ফেরত নিয়ে স্যারের একাউন্টে পাঠিয়েছি।”
 
সুলতান হোসেন, পরিচালক, আল আয়াত মাদক নিরাময় কেন্দ্র:
“এই ব্যবসা করতে হলে অনেক জায়গায় অনেক কিছু করতে হয়। স্যারের জন্যও কিছু করি।”
 
গোলাম মোস্তফা, পরিচালক, জান্নাতী ট্রেডিং:
“আমার বিকাশের দোকান থেকে কে পাঠায়, আমি বলতে পারলাম না।”
 
হাসান আলী, পরিচালক, মাদক নিরাময় কেন্দ্র (উল্লাপাড়া):
“সব কথা বলা ঠিক না। তবে কিভাবে টাকা যায়, আমি বলতে পারছি না।”
 
লাইসেন্স নবায়নেও ঘুষ:
 
মাদক নিরাময় কেন্দ্রের লাইসেন্স নবায়নের জন্যও দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। প্রতিটি লাইসেন্সের নবায়নে দিতে হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
 
উপ-পরিচালকের বক্তব্য
 
এ ব্যাপারে ডিএনসির সিরাজগঞ্জ উপ-পরিচালক মো. রুহুল আমিন বলেন, “আমার ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বর বেশ কিছুদিন বন্ধ রয়েছে। আগে কারা টাকা দিয়েছে, তা বলতে পারছি না।”
 
মাদক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এমন ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ খুবই উদ্বেগজনক। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
banner close
banner close