
সারাদিন গতর খেটে কাজ করি সংসার চালাই। কাজ করি বলে পেটে ভাত জোটে। হামার মতো গরিব মহিলা মানুষের কাজ ছাড়া কোনো উপায় নাই বাবা। শয়নে স্বপনে হামার অন্য কোনো চিন্তা নাই। মে দিবস হামরা বুঝি না। ক্ষেতে কাজ করার সময় কথাগুলো বললেন দীপালি রাণী (৩৮) নামে এক নারী শ্রমিক। তাঁরমতো আরও কয়েকজন নারী মাঠের কাজ করছিলেন নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের অচিনার ডাঙ্গায়।
সেখানে আরতি বালা (৪৫), সুমতি রায় (৫৬), শাপলা খাতুন (৪৬), মোমেনা খাতুন (৩৮) ও জয়মনি বালা (৪৯) কাজ করছিলেন। অনেকের স্বামী নেই। কেউবা অভাবের সংসারের কারণে এ মাঠের কাজ করে চলেছেন।
প্রতিদিন ক্ষেতে খামারে কাজ করে নারী শ্রমিকরা পাচ্ছেন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। আর একই কাজ করে পুরুষ শ্রমিকরা পাচ্ছেন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। মোমেনা খাতুন (৩৮) বলেন, হামরাতো কাজত ফাঁকি দেইনা, পুরুষের মতো কাজ করি। তাও হামার রেট কেনে কম ব্যাহে কনতো। হামরা মে দিবস টে দিবস বুঝি না ব্যাহে, কাজ করি ভাত খাই।
সৈয়দপুরের বিসিক শিল্পনগরীসহ অলিগলিতে গড়ে উঠেছে ছোট বড় অনেক শিল্প কল-কারখানা। এসব কল-কারখানায় কাজ করছেন নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোররা। বড় বড় কারখানাগুলোতে মে দিবসের ছুটি রাখা হয়। বিসিক শিল্প নগরীতে কর্মরত নারী শ্রমিক সখিনা, নয়নতারা ও সাহের বানু জানান, মে দিবসে আমাদের কারখানা বন্ধ থাকবে। সারাদিন আনন্দ হৈহুল্লোর করে কাটাবো আমরা। তবে আমাদের কল্যাণের জন্য যে সরকারিভাবে যে শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র আছে তা কাজে আসছে না। তাঁরা আমাদের খোঁজও নেয়না এমনকি চিকিৎসাও নাই। শহরের অলিগলিতে গড়ে ওঠা ছোট ছোট কারখানাগুলোতেও মে দিবসে কাজ করে থাকেন শ্রমিকরা।
সৈয়দপুরের সবচেয়ে বড় তৈজসপত্র তৈরির কারখানা রয়্যালেক্স মেটাল ইন্ডাষ্ট্রির নোয়াহ্ কোম্পানিতে কাজ করেন প্রায় ১২০০ শ্রমিক-কর্মচারী। এরমধ্যে সাড়ে ৪০০ নারী শ্রমিকের তৈরি হচ্ছে নান্দনিক রাইস কুকার, প্রেসার, কুকার, ননস্টিক ফ্লাইপ্যান, ব্লেন্ডার, ওভেন, ইনডাকশন প্রভৃতি। এখানকার কর্মরত নারী শ্রমিকরা জানান, সুন্দর পরিবেশে কারখানাটিতে কাজ করছি আমরা। মে দিবসের ছুটি থাকছে কারখানায়। এছাড়া বিভিন্ন দিবস ও উৎসবে বন্ধ থাকে কারখানাটি।
রয়্যালেক্স মেটাল ইনআষ্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাজ কুমার পোদ্দার জানান, কারখানাটি মুলত নারী বান্ধব। এখানে নারী-পুরুষের হাতের ছোঁয়ায় বিশ্বনন্দিত পণ্য তৈরি হচ্ছে। যাচ্ছে ভারত, নেপাল ও ভুটানে। মহান মে দিবসে আমার এ কারখানাটি বন্ধ থাকবে। সব-সময় শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে। ফলে ওরা সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছেন, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া ও বসতভিটাও কিনে স্বচ্ছলতা এনেছেন।
আরও পড়ুন: