
ছবি : বাংলা এডিশন
কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলকারীদেরকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি আব্দুল মান্নানকে গ্রেপ্তারের একদিন পর জামিন দিয়েছে আদালত। ছুটির দিনে জামিনের প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ছাত্রজনতা। রোববার কুষ্টিয়া আদালত চত্বরে জড়ো হয়ে তার জামিন বাতিল ও জামিনের সঙ্গে সম্পৃক্তদের শাস্তির দাবি করেন তারা।
শুক্রবার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ। পরদিন শনিবার কুষ্টিয়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক গোপাল চন্দ্র সরকার আব্দুল মান্নানকে জামিন দেন। এ ঘটনা শহরে ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন ছাত্র-জনতা। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের সামনে বিক্ষোভে ছাত্র-জনতা, বিএনপি ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের গুলি করে হত্যা চেষ্টা মামলায় এজাহারভুক্ত ৫৭ নম্বর আসামি কুষ্টিয়া পৌরসভার সদ্য সাবেক সার্ভেয়ার আব্দুল মান্নান (৪৫)। কুষ্টিয়া পৌর ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়াদি ফকিরপাড়া এলাকার মৃত আনোয়ার প্রামাণিকের ছেলে। শুক্রবার বিকালে বাড়াদি ফকিরপাড়া এলাকায় অবস্থিত তার নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি কুষ্টিয়া পৌরসভার সার্ভেয়ার পদে বহু বছর কর্মরত ছিলেন। কয়েকদিন আগে তাকে ভেড়ামারা পৌরসভায় বদলি করা হয়েছে৷ কুষ্টিয়া পৌরসভায় কর্মরত অবস্থায় অনিয়ম দুর্নীতি করে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন৷
জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিহত করতে মাঠে সক্রিয় ছিল মান্নান। ৫ আগস্টের পর তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় তিনি আত্মগোপনে চলে যান। কিছুদিন পলাতক থাকার পর পুনরায় কুষ্টিয়া পৌরসভার দাপ্তরিক কাজে যোগ দেন তিনি। সম্প্রতি লাঠি হাতে নিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিহত করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকেই তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জোড়ালো হয়। গ্রেপ্তার এড়াতে মান্নান গত ১৬ এপ্রিল পৌরসভা থেকে বের হন। এরপরে আর অফিসে যাননি। তার বিরুদ্ধে জাল সার্টিফিকেট দিয়ে কুষ্টিয়া পৌরসভায় সার্ভেয়ার পদে নিয়োগ নেওয়াসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের ওপর হামলা ও গুলি করে হত্যা চেষ্টার ঘটনা ঘটে৷ এতে আহত ইয়ামিন আলী বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় ৬৭ জনের নামোল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বরে দায়ের করা মামলায় বাদী ইয়ামিন আলী উল্লেখ করেছেন যে, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহন করে বেলা অনুমান আড়াইটার দিক্র আমি সহ অন্যান্য আন্দোলনকারীরা কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশন মসজিদের দক্ষিন পাশে রাস্তার উপর পৌছাইলে আসামীরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার মারাত্বক অস্ত্র-শস্ত্র যেমন, আগ্নেয়াস্ত্র, রাম-দা, হাসুয়া, চাইনিজ কুড়াল, বেঁকি, হাতুড়ী, লোহার রড, বাঁশের লাঠি, কাঠের বাটাম, ইট-পাটকেল ইত্যাদি হাতে করিয়া রণসাজে সজ্জিত হয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে আক্রমন করিতে থাকে। তাদের কাছে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র (শর্টগান) দ্বারা আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করিয়া মুহুর্মুহু গুলি বর্ষন শুরু করিলে আমি আন্দোলনের সম্মুখভাগে থাকায় আসামীদের ছোড়া গুলি আমার ডান চোখে ০২টি, মুখের বাম দিকে ০৪টি ও মুখের ডানদিকে ৫টি গুলি লাগে ও আমার বুকের বিভিন্ন জায়গায় সর্বমোট ১৮টি গুলি বিদ্ধ হয়। আমি গুলির আঘাতে গুরুত্বর রক্তাক্ত জখম প্রাপ্ত হইয়া রাস্তায় লুটাইয়া পড়িলে অনান্য আসামীগন আমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ছুটিয়া আসিয়া লাঠি, কাঠের বাটাম দিয়ে মারপিট করে ফুলা জখম ও রক্তাক্ত জখম করে। আমার সাথে থাকা আন্দোলকারী ও স্বাক্ষীরা আমাকে উদ্ধার করিয়া পরিস্থিতি একটু শান্ত হইলে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে যায় এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। আমি চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হয়ে আমার নিকট আত্মীয়-স্বজন ও স্বাক্ষীগনের সহিত আলাপ-আলোচনা করিয়া থানায় মামলা দায়ের করিতে গেলে দেশের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারনে দেশের পরিবেশ অস্থিতিশীল থাকায় ও থানা কর্তৃপক্ষের স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থগিত থাকায় পরবর্তীতে থানা কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম স্বাভাবিক হইলে কম্পিউটারকৃত ও আমার স্বাক্ষরিত এজাহার থানায় দায়ের করিতে কিছুটা বিলম্ব হয়।
কুষ্টিয়া আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) খন্দকার সিরাজুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেন নি।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া আদালত পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল ইসলাম বাংলা এডিশন কে বলেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আন্দোলকারীদের হত্যা চেষ্টা মামলার আসামি আব্দুল মান্নানকে জামিন দেয়ার প্রতিবাদে আদালত চত্বরে মানববন্ধন করেছেন ছাত্রজনতা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হামলায় আহত ইয়ামিন আলী নামে এক যুবকের দায়েরকৃত হত্যা চেষ্টা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মান্নান।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলকারী ওপর হামলা ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগে ইয়ামিন আলী নামে এক যুবক বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। দায়েরকৃত মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মান্নানকে শুক্রবার বিকালে গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশ। পরে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। শনিবার আদালত তাকে জামিন দেন।
আরও পড়ুন: