শনিবার

৩ মে, ২০২৫
১৯ বৈশাখ, ১৪৩২
৫ জিলক্বদ, ১৪৪৬

‘আ.লীগ পরিবারের সদস্য’ সনদে মামলা থেকে অব্যাহতি, বিএনপির পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ দুই নেতার

প্রতিনিধি,কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ২১ এপ্রিল, ২০২৫ ১৭:৪৯

শেয়ার

‘আ.লীগ পরিবারের সদস্য’ সনদে মামলা থেকে অব্যাহতি, বিএনপির পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ দুই নেতার
ছবি : বাংলা এডিশন

বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেও ‘আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য’ পরিচয় দিয়ে মামলা থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন রাজীবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের দুই নেতা। আন্দোলন-সংগ্রামে নিষ্ক্রিয় থাকার পর এখন তারা আবারও বিএনপির নেতৃত্বে আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির নতুন কমিটি গঠনের আগ মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে দলে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে।

প্রশ্নবিদ্ধ এই দুই নেতা হলেন ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমান ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন। পেশায় তারা দুজনই নয়াচর বাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, পূর্বের কমিটিতে দায়িত্বে থেকেও আজিজুর ও দেলোয়ার প্রায় পুরো সময় নিষ্ক্রিয় ছিলেন। সরকারি চাপ ও চাকরি হারানোর ভয়ে তারা আন্দোলনে অংশ নেননি। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে একটি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হন তারা। তবে পরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ‘আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য’ হিসেবে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে নিজেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থেকে নাম সরিয়ে ফেলেন। কিন্তু একই মামলায় জড়িত অন্য বিএনপি নেতাকর্মীরা এখনো মামলার আসামি হিসেবে রয়েছেন।

চার্জশিট সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপির ঢাকায় অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশে অংশ নিতে রাজীবপুর থেকে মাইক্রোবাসে রওনা হন আজিজুর, দেলোয়ারসহ মোট ১১ জন। পথে শেরপুরের শ্রীবরদি থানার সামনে পুলিশ তাদের থামিয়ে তল্লাশি চালিয়ে পাঁচটি অবিস্ফোরিত ককটেল ও ১০টি বাঁশের লাঠি জব্দ করে এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করে। মামলায় আজিজুর ৩ নম্বর ও দেলোয়ার ৬ নম্বর আসামি ছিলেন। পরে তারা জামিনে মুক্তি পান।

পরবর্তী সময়ে চার্জশিটে বলা হয়, আজিজুর ও দেলোয়ার চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ যাচ্ছিলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। স্থানীয় চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের প্রত্যয়ন ও চিকিৎসাপত্রের ভিত্তিতে তারা মামলা থেকে বাদ পড়েন। অথচ একই চার্জশিটে অপর নয়জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়।

স্থানীয় বিএনপি নেতা জহুরুল ইসলাম বলেন, “চাকরি ও নিজের নিরাপত্তা রক্ষায় তারা আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য পরিচয় দিয়ে মামলা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। অথচ একই মামলায় গ্রেপ্তার অন্য নেতাকর্মীদের কোনো সহযোগিতা করেননি। এখন দলের ভালো সময় এসেছে দেখে আবার পদ পাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন।”

ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন এ বিষয়ে বলেন, “তারা নিজেরাই আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য উল্লেখ করে প্রত্যয়ন তৈরি করে এনেছিলেন। মানবিক বিবেচনায় আমি স্বাক্ষর করেছি।”

মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমান বলেন, "আমি বিগত কমিটিতে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ছিলাম। আবারও একই পদ প্রত্যাশী। আওয়ামীলীগ পরিবারের সদস্য পরিচয়ের বিষয়টি আমার জানা নেই। তদন্তকারী কর্মকর্তা সেটা ভালো বলতে পারবেন। আমার বংশে কেউ আওয়ামী লীগ নাই।"

তবে মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া আরেক নেতা দেলোয়ার বলেন, "সেদিন আমরা ঢাকার উদ্দেশে যাওয়ার সময় মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার হই। আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য হিসেবে প্রত্যয়নপত্রটি আমি দেখেছি। তবে সেটির বিষয়ে আমার জানা নেই। আমার বংশে কেউ আওয়ামী লীগ নেই।"
বিলুপ্ত ঘোষণা করা কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। আবারও একই পদ প্রত্যাশী।’ বিএনপির রাজনীতি করা প্রশ্নে বলেন দেলোয়ার।"

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শ্রীবরদী থানার তৎকালীন এসআই রিপন চন্দ্র সরকার বলেন, "পূর্ব পরিচয়ের সূত্রে ওই দুই আসামি সেদিন চিকিৎসার উদ্দেশে অপর আসামিদের গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন। চিকিৎসাপত্র ও চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্রে তেমন তথ্য ছিল। অনেকদিন পূর্বের বিষয় হওয়ায় পুরো বিষয় মনে করতে পারছি না।"

রাজীবপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোখলেছুর রহমান বলেন, "চাকরি রক্ষার স্বার্থে কে কী করলো না করলো ওইটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। তারা বিএনপি হিসেবে জেল খেটেছেন। জেল থেকে বের হওয়ার পরও বিএনপিতে ছিল। তাদেরকে বা কারা আওয়ামী পরিবারের সদস্য বানিয়েছে সে তথ্য আমাদের নোটিশে নাই। তারা যদি এমন কিছু করে থাকে সেটা আমরা ভালো ভাবে দেখবো না। কেন তারা এ জায়গায় দুর্বল ছিল তা দেখা হবে।"

banner close
banner close