শনিবার

৩ মে, ২০২৫
২০ বৈশাখ, ১৪৩২
৫ জিলক্বদ, ১৪৪৬

আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমি দখল ও দেয়াল নির্মাণ 

কুষ্টিয়া প্রতিনিধ

প্রকাশিত: ২১ মার্চ, ২০২৫ ২০:৩১

শেয়ার

আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমি দখল ও দেয়াল নির্মাণ 
আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমি দখল ও দেয়াল নির্মাণ ।

কুষ্টিয়ার শহরে এক প্রবাসীর জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে আরিফুল ইসলাম আরিফের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। আদালত ওই জমির ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেছে। অথচ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইটের পাকা দেয়াল নির্মাণ করছে আরিফ ও তার ক্যাডার বাহিনী। এছাড়াও বিভিন্ন হুমকিধামকি দিয়ে আসছে তারা। যেকোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশংকা রয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন জমির মালিক ভুক্তভোগী আব্দুস সামাদ। 


ভুক্তভোগী আব্দুস সামাদ কুষ্টিয়া সদর উপজেলার খোর্দ্দ আইলচারা এলাকার মহিউদ্দিন বক্সের ছেলে। বিবাদী আরিফুল ইসলাম আরিফ মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বামুন্দী গ্রামের হারেজ উদ্দিনের ছেলে। আরিফ জমি দখলের চেষ্টা ও বিভিন্ন হুমকিধামকি দিলে জমির মালিক আব্দুস সামাদ বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।  মামলায় কুষ্টিয়া সদর সহকারী জজ আদালতের বিচারক সঞ্জয় কুমার পাল ওই জমির ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেছে। 

আদালতের স্থিতাবস্থা অমান্য করে সন্ত্রাসী কায়দায় ওই জমিতে গাড়ি গাড়ি ইট ও বালি এনে রেখেছেন আরিফ। শুধু তাই-ই নয়, আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমিটিতে ইটের পাকা দেয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী সামাদ। 

জানা গেছে, কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস মৌজার আরএস ১৩৯৬ খতিয়ানের ৬৪০৭ নম্বর দাগের ৯ পয়েন্ট ৩৭ শতক জমির মালিক ভুক্তভোগী আব্দুস সামাদ। নিয়তি সুলতানার কাছে থেকে ক্রয় সূত্রে ওই জমির মালিক তিনি। বহু বছর ধরে তিনি ভোগদখলে করে আসছিলেন। হঠাৎ করে জমির মালিকানা দাবি করে আরিফ জমি দখলের চেষ্টা করে ও হুমকিধামকি দেন। এ ঘটনায় ন্যায় বিচারের আশায় আদালতে মামলা দায়ের করেন সামাদ।  যা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

আরও জানা গেছে, অভিযুক্ত আরিফ ও তার লোকজন গায়ের জোরে সন্ত্রাসী কায়দায় জমিটি দখলের চেষ্টা করলে সামাদ আদালতের দারস্থ হন। এক আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনা করে মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই জমির ওপর  স্থিতাবস্থা জারি করেন। আদেশে আদালত উক্ত মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত, ওই সম্পত্তিতে বিবাদীগণের কোনও প্রবেশাধিকার ও নির্মাণ কাজ এবং জমি হস্তান্তর না করার নির্দেশ দেন। তবে আদালতের আদেশ অমান্য করে ওই জায়গায় ইটের পাকা দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। যা আদালত অবমাননাকর অপরাধ। 

সরেজমিন দেখা গেছে, বিরোধপূর্ণ ওই জমিতে নতুন একটি পাকা ইটের দেয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। ওই জমিতে ইট ও বালুর স্তুপ করে রাখা হয়েছে। কয়েকজন মিস্ত্রি বেশ কয়েকদিন ধরে দেয়াল নির্মাণের কাজ করছে। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ক্রয় সূত্রে এই জমির মালিক আব্দুস সামাদ। নিয়তি সুলতানার কাছে থেকে অনেক বছর আগে জমিটি সামাদ কিনেছেন। অথচ আরিফ ও তার লোকজন জোরপূর্বক জমিটি দখল করেছেন। আদালতে এনিয়ে মামলা চলছে। ওই জমির ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেছে আদালত। অথচ গায়ের জোরে সন্ত্রাসী কায়দায় ওই জমিতে গাড়ি গাড়ি ইট বালু এনে রেখেছেন। এবং ইটের পাকা দেয়াল নির্মাণ করছে। এনিয়ে যেকোনো সময় বড় ধরনের অপ্রীতিকর  ঘটনা ঘটতে পারে।

ভুক্তভোগী জমির মালিক ও মামলার বাদী আব্দুস সামাদ বলেন, আমি ২০১২ সালে ৫ শতক জমি কিনেছিলাম। এবং ২০১৬ সালে ৪ পয়েন্ট ৩৭ শতক জমি কিনেছেন। জমির মালিক নিয়তি সুলতানার কাছে থেকে আমি মোট ৯ পয়েন্ট ৩৭ শতক জমি ক্রয় করি। চৌড়হাস মৌজার ৬৪০৭ নম্বর দাগের জমিটি আমি সরকারি নিয়মনীতি মেনে ক্রয় করি। দীর্ঘদিন জমিটি আমি ভোগদখল করে আসছি। কিন্তু গায়ের জোরে আমার এই জমি দখল করেছে আরিফ। এ ঘটনায় আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। জমিটিতে বর্তমানে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে  কয়েকদিন ধরে সেখানে পাকা ইটের দেয়াল নির্মাণ করছেন। আদালত স্থিতাবস্থা জারি করেছে। সেই জায়গায় দেয়াল নির্মাণ করা বেআইনী। আমি এর সঠিক বিচার চাই। আমি কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার স্যারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

সরেজমিনে গিয়ে আরিফুল ইসলাম আরিফকে না পাওয়া গেলেও তার পক্ষের হয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই রোডের আনোয়ারুল ইসলাম। এসময় তিনি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল দেখান এবং জমির মালিকানা দাবি করেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানি না। আমরা কারো জমি অবৈধভাবে দখল করিনি৷

এ বিষয়ে অভিযুক্ত বিবাদী আরিফুল ইসলাম আরিফের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ কারণে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আরিফুল ইসলাম পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল করে আনোয়ারুল, সুমন ও সাজ্জাদকে দিয়েছি কি-না সেটি নিশ্চিত হওয়া যায় নি।

এ বিষয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী মাহাতাব উদ্দিন বলেন, ক্রয় সূত্রে ওই জমির মালিক আব্দুস সামাদ। কিন্তু ওই জমিটি দখলের চেষ্টা করছে আরিফ। এ ঘটনায় আদালতে মামলা চলমান রয়েছে৷ ওই জমির ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেছে আদালত। অথচ বিবাদী আরিফ আদালতের আদেশ অমান্য করে ওই জমিতে ইটের পাকা দেয়াল নির্মাণ করছেন। ব্যাংক নিলাম করেছিল, সেখান থেকে আরিফ কিনেছিলেন। আদালতের আদেশ অবমাননা করেছে আরিফ। 

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন বলেন, অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। এবং অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে

banner close
banner close