বৃহস্পতিবার

১ মে, ২০২৫
১৮ বৈশাখ, ১৪৩২
৪ জিলক্বদ, ১৪৪৬

১০০ টাকা ভাড়ায় গিয়ে আসামি হলেন ভ্যান চালক

 নওগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৪ মার্চ, ২০২৫ ১৭:৫৩

আপডেট: ৪ মার্চ, ২০২৫ ১৯:১৩

শেয়ার

১০০ টাকা ভাড়ায় গিয়ে আসামি হলেন ভ্যান চালক
১০০ টাকা ভাড়া মারতে গিয়ে আসামি হলেন ভ্যান চালক

নওগাঁর বদলগাছীতে খাদ‍্য অধিদপ্তরের ওএমএসের চাল কালোবাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে পাচারের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে মুলহোতাদের বাদ দিয়ে নিরীহ ভ্যানচালকের নামে মামলাটি করা হয়েছে। এছাড়া নাম মাত্র থাকা ওই মামলাটিতে ডিলারকেও আসামি করা হয়েছে। তবে বাদ দেওয়া হয়েছে পিছন থেকে কলকাঠি নাড়ানো মুলহোতাদের। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সাবরিন মোস্তারী দায়সারাভাবে সোমবার ৩মার্চ রাতে এই মামলাটি করেছেন। অথচ এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই আছে বিস্তর অভিযোগ। 

এমন ঘটনায় উপজেলা জুড়ে চলছে সমালোচনার ঝড়।

এর আগে গতকাল ৩ই মার্চ সকালে ওএমএসের চাল অসৎ উদ্দেশ্যে পরিবহণের সময় এক ভ্যানচালককে আটক করে। সেই সাথে মজুদ রাখার দায়ে আরও এক নারীকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৮৩২ কেজি চাল জব্দ করে উপজেলা প্রশাসন। 

স্থানীয়রা জানান, সোমবার সকালে অছির উদ্দিন নামে এক ভ্যান চালক খাদ্য গুদাম থেকে ৩০কেজি ওজনের ১৫ বস্তা (৪৫০কেজি) ওএমএসের চাল নিয়ে সাহেব বাজার ডিলার পয়েন্টের দিকে রওনা হয়। কিন্তু সেখানে না গিয়ে ইসমাইলের বাড়ীতে নিয়ে যাচ্ছিল। যাওয়ার সময় ওই চালসহ ভ্যান চালককে আটক করা হয়। এছাড়া ভ্যান চালকের কথামতো সদর ইউনিয়নের জিধিরপুর গ্রামের ইসমাইলের বাড়ী থেকে আরো ৩৮২ কেজি চাল জব্দ করা হয়। সেই সাথে ইসমাইলের স্ত্রী বিজলি বেগমকে আটক করে উপজেলা প্রশাসন। 

তারা জানান, আনোয়ার হোসেন টগর নামের এক ডিলারের নামে বরাদ্দকৃত উঠানো চালগুলো প্রতিদিন ৩০টাকা কেজি দরে দুস্থ ও গরীব মানুষের মাঝে বিক্রি করার কথা থাকলেও বেশী লাভের আশায় কালোবাজারে চাল বিক্রি করে দিচ্ছিলেন পিছন থেকে কলকাঠি নাড়ানো ব্যক্তি হাসান। 

তারা আরও জানান, আনোয়ার হোসেন টগরের নামে ডিলার থাকলেও হাসানুজ্জামান এর মূলহোতা। কারণ দিনশেষে চাল বিক্রির সকল হিসাব তাকে দিতে হতো বলে জানান ৫০০টাকায় দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা ইউসুফ। তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে জানি না, হাসানুজ্জামান বলতে পারবে। কারণ সে এই ডিলার দেখাশুনা করে। তবে আনোয়ার হোসেন টগরের ডিলার হাসানুজ্জামান কেন দেখাশুনা করবে এমন প্রশ্নে তেমন কোনো উত্তর দিতে পারেনি ইউসুফ।

একইভাবে মূলহোতা বানিয়ে মামলার আসামী ডিলার টগর বলেন, আমি শুধু নামে ডিলার। সব কাজ করেন হাসানুজ্জামান। এছাড়া খাদ্য কর্মকর্তা সকল অনিয়মের সাথে জড়িত।

তিনি আরও বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। তবে বেশ কিছুদিন ধরে আমার অবর্তমানে ইউসুফ আলী নামের একজন ব্যক্তি প্রতিদিন ৫শত টাকার বিনিময়ে দেখাশুনা করতো। তাই ইউসুফ বিষয়টি ভালো বলতে পারবে।

এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন ইউসুফকে অথরিটি দেওয়া আছে। তাই তার নামেও মামলা করা হয়েছে।

এ ব‍্যপারে ভ্যান চালক অছির উদ্দিন বলেন, গোডাউনের সরদার সাইদুর আমাকে চালগুলো সেখানে দিয়ে আসতে বলেছে । তাই নিয়ে যাচ্ছিলাম। আমাকে শুধু ১শত টাকা করে ভাড়া দেয়। একশ টাকার ভাড়া মারতে গিয়ে এখন আসামি হলাম। আমি গরীব মানুষ, টাকার জন্য ভাড়া মারছিলাম।

এ বিষয়ে হাসানুজ্জামান কাছে মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফুডে কিছু হলে আমার উপর দোষ আসে। তবে কি কারণে দোষ আসে, আমি সঠিক জানি না। আনোয়ার হোসেন টগরের ডিলার আপনি কেনো দেখাশুনা করেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে আমি জানিনা। এগুলো তারা মিথ্যা বলছে। 

ট্যাগ অফিসার শাহরিয়া দায়সারা ভাবে বলেন, আমি সকালে ডিলারের ঘরে এসে ৩২ বস্তা চাল পেয়েছি। আর ১৮টি খালি বস্তা পেয়েছি। খাদ্য গুদাম থেকে ডিলারের ঘরে কোনো চালের বস্তা আসেনি। পথিমধ্যে চাল কি হয়েছে আমি কিছু বলতে পারবোনা।

বারবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সাবরিন মোস্তারী। একসময় ফোন ধরলেও পরিচয় পাওয়ার পর সংয়োগ কেটে দেন তিনি। 

নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন মোবাইলে বলেন, অন্য কাউকে অথরিটি দিয়ে চাল বিক্রির নিয়ম আছে। আর উপজেলা কমিটি আছে তারাই বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন। তবে খাদ্যের কোনো কর্মকর্তা জড়িত থাকলে, অভিযোগ সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

এ ব‍্যপারে বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহজাহান আলী বলেন, গতকাল রাতে এ ব‍্যপারে ৫জনকে আসামী করে একটি মামলা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও খাদ্যবান্ধব কমিটির সভাপতি ইসরাত জাহান ছনি বলেন, গতকালের বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে মামলা করা হয়েছে। ভ্যানচালক বিষয়টি আগে থেকেই জানতো। বিজলির বাড়িতে পাওয়ায় তাকে ও তার স্বামীকে আসামি করা হয়েছে। আর সর্বশেষ অথরিটি হিসেবে ইউসুফের নাম আসায় তাকে আসামি করা হয়েছে। 

বিজলির স্বামী ইসমাইলকে জড়িত করা হলে হাসানুজ্জামানকে কেন জড়ানো হলোনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাসানুজ্জামানের নামটা ওভাবে কেউ বলেনি। তারপরও বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করে দেখবেন। এছাড়া যদি কোনো কর্মকর্তা জড়িত থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

banner close
banner close