
মামলার আসামি হয়েও চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী, মাদক ও সোনা চোরাকারবারি যুবলীগ নেতা ফয়সাল ইকবাল এলাকায় ঘুরছেন বুক ফুলিয়ে। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হলেও অজ্ঞাত কারণে পুলিশ এখনও তাকে গ্রেফতার করেনি।
স্থানীয় সাংসদ আলী আজগর টগরের সাথে আছে তার দহরমমহরম সম্পর্ক। সেই সুবাধে ছাত্র আন্দোলনের প্রথম থেকেই আন্দোলন বানচাল করতে হামলা চালানোর নেপথ্যের কারিগরের ভূমিকা পালন করে। এরপর জীবননগর থানায় মামলাও দায়ের করা হয়। তবে রহস্যজনক কারণে পুলিশ তাকে আটক করেনি।
জানা গেছে, নব্বই দশকে ঢাকার বিক্রমপুর থেকে চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে আসা ফয়সালের বাবা ফরহাদ এক সময় গ্রামে গ্রামে মাথায় ফেরি করে হাড়িপাতিল বিক্রি করতেন। তবে, ফয়সালের পরিবার এখন কয়েকশ কোটি টাকার মালিক।
ফয়সাল লেখাপড়া বেশিদূর না করেই টাকার নেশায় বুদ হয়ে জড়িয়ে পড়েন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। সম্পর্ক গড়েন উপজেলার কুখ্যাত চোরাকারবারি ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের সাথে। বাগিয়ে নেন পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ। স্থানীয় সাংসদ টগরের গুড বুকে নাম লেখাতে খুববেশি দেরি হয়নি সুকৌশলী ফয়সালের। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ভাগ্যের চাকা পইপই করে ঘুরতে থাকে। রাতারাতি মালিক বনে যান শতকোটি টাকার।
সাবেক এমপি টগরের আস্থাভাজন হওয়ায় আওয়ামী শাসনামলে ফয়সালের দখলে ছিলো জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের বেনিপুর বাওড়, শিয়ালমারি পশুহাট, জীবননগর আম বাজার। কথিত আছে যুবলীগের এই নেতা আন্তঃজেলা মোটরসাইকেল ও ট্রাক চোর সিন্ডিকেটের সদস্য। করেন ঠিকাদারিও। বৈধ ব্যাবসার পাশাপাশি মাদক ও গোল্ড সিন্ডিকেট চক্রের অন্যতম হোতা এই ফয়সাল। এসব করেই সম্পদের পাহাড় গড়েছেন যুবলীগের এই নেতা।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, রাতারাতি শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া ফয়সাল এমন কোন অপরাধ নেই যা করেনি। এলাকায় তার ও তার পরিবারের অনেক সদস্যের নামে সম্পদের পাহাড় আছে।
উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের বেনিপুর বাওড়ে নৈশপ্রহরী বাদলকে হত্যার পর পানিতে ডুবে মারা গেছে বলে চালিয়ে দেন ফয়সাল। বিএনপি নেতা রমজান আলী হত্যা মামলারও প্রধান আসামী ছিলেন। তবে কাড়িকাড়ি টাকা খরচ করে সব মামলা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে নিয়েয়েছেন তিনি। পুলিশ তার নিজের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল পরিমান আমদানি নিষিদ্ধ ফেন্সিডিল উদ্ধার করলেও অজ্ঞাত কারণে মামলায় আসামী করা হয়নি তাকে।
গত ৫ই আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ১০ অক্টোবর জীবননগর থানায় দায়েরকৃত একটি মামলার এজাহার নামীয় আসামী হন ফয়সাল। দীর্ঘদিন গাঢাকা দিয়ে থাকলেও বর্তমানে বুক ফুলিয়েই এলাকায় গুরে বেড়াচ্ছেন যুবলীগের এই নেতা। দেশ জুড়ে 'অপারেশন ডেভিল হান্ট' চললেও যুবলীগের এই ত্রাসকে গ্রেফতারে পুলিশের নেই কোনো ভূমিকা।
বিএনপির একটি সুত্র বলছে, খোদ উপজেলা বিএনপির প্রভাবশালী এক নেতার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বয়েছে ফয়সালের। ঢাকায় আত্মগোপনে থাকা ফয়সালের সাথে একাধিকবার মিটিংও করেছেন বিএনপির ওই নেতা। যার কারণে এখনো ফয়সাল এলাকায় বুক ফুলিয়ে চলছে। এছাড়া কোনো মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এলাকায় বুক ফুলানো বিচরণ করছে সে।
বিশ্বস্ত একটি সুত্রের দাবী, আজ সোমবার সকালেও শহরে দেখা গেছে ফয়সালকে। তারই ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী শুকুরকে সঙ্গে করে টিভিএস এপাচি মোটরসাইকেল যোগে জেলা শহরে গিয়েছেন তিনি।
তবে যুবলীগ নেতা ফয়সাল ইকবালের এলাকায় অবস্থানের ব্যাপারে কিছুই জানেন না জীবননগর থানা পুলিশ। থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মামুন হোসেন বিশ্বাস মুঠোফোনে বলেন, সে যেখানেই থাকুক অবশ্যই তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
আরও পড়ুন: