বৃহস্পতিবার

১ মে, ২০২৫
১৮ বৈশাখ, ১৪৩২
৩ জিলক্বদ, ১৪৪৬

পটুয়াখালীতে সার সংকটে দিশেহারা তরমুজ চাষীরা

পটুয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ১৫:২৪

আপডেট: ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ১৫:২৬

শেয়ার

পটুয়াখালীতে সার সংকটে দিশেহারা তরমুজ চাষীরা
ছবি: বাংলা এডিশন

পটুয়াখালীতে চলতি মৌসুমে তরমুজ চাষে সার সংকটে দিশেহারা কৃষক। পরিবহন বিঘ্নতা ও প্রয়োজনের তুলনায় সরবরাহ কম থাকার সুযোগে ডিলার ও ব্যবসায়ীরা বেশি দামে সার বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ করেন কৃষক।

কৃষি বিভাগের পরামর্শ না নিয়ে দালাল এবং কালোবাজারিদের খপ্পরে পড়ে অনেক এলাকায় বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক। আবার অনেক এলাকায় বেশি দামেও মিলছে না সার।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারি মাসে সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ৬০৬ মেট্রিক টন বিভিন্ন প্রকারের সারের চাহিদা দেয়া হয়েছে। কিন্তু গত ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত ৬ হাজার ৯৯৩ টন পাওয়া গেছে। শেষ সপ্তাহে আরও বরাদ্দ হলেও অনেক ডিলার সার তুলতে পারেননি। ভরা মৌসুমে সার সংকটের কারণে এবার তরমুজের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, চলতি বছর জেলার ৮টি উপজেলায় ২৫ হাজার ২৩১ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে গত বছর চাষ হয়েছে ২৩ হাজার ৬০০ হেক্টরে। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি তরমুজ উৎপাদন হয় দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালীতে। এ বছর এখানে ৮ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে।

এ ছাড়াও গলাচিপায় ৮ হাজার ১২০ হেক্টর, বাউফলে ৩ হাজার ৭২১ হেক্টর, কলাপাড়ায় ২ হাজার ৯৫০ হেক্টর, দশমিনায় ১ হাজার ৩০০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ৭৬২ হেক্টর, দুমকিতে ১০৮ হেক্টর ও মির্জাগঞ্জে ২০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

জেলায় উৎপাদিত তরমুজ আকারে বড়, সুস্বাদু ও সুমিষ্ট হওয়ায় সারা দেশে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। পাইকাররা ক্ষেত দেখে বায়না দেয়া শুরু করেছেন। রোজা সামনে রেখে ভালো দাম পেতে অনেক এলাকায় আগাম তরমুজ ক্ষেতে দিনরাত পরিচর্যা করছেন। এরই মধ্যে কিছু এলাকায় পাকা তরমুজ কেটে বাজারজাতও শুরু হয়েছে। এমন অবস্থায় সার সংকট দেখা দেয়ায় তরমুজ চাষিদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

একাধিক তরমুজ চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি একর জমিতে টিএসপি, ইউরিয়াসহ বিভিন্ন প্রকারের ১০ থেকে ১২ বস্তা সার প্রয়োজন। চাহিদা অনুযায়ী বাজারে সারের সরবরাহ না থাকায় সার সংকট দেখা দিয়েছে। আর সংকট দেখিয়ে স্থানীয় ডিলার ও ব্যবসায়ীরা বেশি দামে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ আছে। বাধ্য হয়ে বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে।

কলাপাড়ার বানাতিপাড়া এলাকার কৃষক আমজেদ প্যাদা জানান, তারা ১০ জন মিলে ৫০ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। তাদের ৫০০ বস্তা সারের প্রয়োজন হলেও কিনতে পেরেছেন মাত্র ২০০ বস্তা। গত এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন দোকানে ঘুরেও প্রয়োজনীয় সার কিনতে পারেননি।

রাঙ্গাবালী উপজেলার চর নজিরের কৃষক আমিরুল হোসেন জানান, তিনি ২৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ করছেন। তার কমপক্ষে ২৫০ বস্তার সার প্রয়োজন হলেও মাত্র ৭৫ বস্তা কিনতে পেরেছেন। প্রতি বস্তা ইউরিয়া সার ১ হাজার ৬০০ ও টিএসপি ১ হাজার ৯০০ টাকায় কিনেছেন। অথচ কৃষি বিভাগের নির্ধারিত দাম ৫০ কেজির প্রতি বস্তার ইউরিয়া ১ হাজার ৩৫০ ও টিএসপি ১ হাজার ৬০০ টাকা।

রাঙ্গাবালীর সার ব্যবসায়ী কামাল পাশা জানান, তরমুজ চাষের জন্য এখন প্রচুর সারের চাহিদা রয়েছে। আমরা চাহিদামাফিক সার সরবরাহ পাচ্ছি না। গত সপ্তাহে ২০০ বস্তা চাহিদা দিয়ে মাত্র ২০ বস্তা সার পেয়েছি। তবে তিনি সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সারের সংকট চলছে, বিষয়টি তেমন নয়। জানুয়ারি মাসে ১৮ হাজার ৬০৬ মেট্রিক টন বিভিন্ন প্রকারের সারের চাহিদার বেশিরভাগই উত্তোলন হয়েছে। ডিলারদের কাছে সার মজুদ আছে। সমন্বিত ব্যবস্থাপনায় সারের কোনো সংকট হবে না।’

 

 

banner close
banner close