
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে আলোচিত ইউপি চেয়ারম্যান নইমুদ্দিন সেন্টু হত্যা মামলার অন্যতম সাক্ষী ও তার ভাতিজা জাহাঙ্গীর সরকারকে হত্যাচেষ্টা করেছে আসামিরা। তাকে বেধড়ক মারধর ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।
আহত জাহাঙ্গীর সরকার কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের ফিলিপনগর দারোগার মোড় এলাকার মৃত মনির উদ্দিন সরকার। চেয়ারম্যান হত্যা মামলার দুই নম্বর সাক্ষী তিনি।
আহত জাহাঙ্গীর সরকার বলেন, ফিলিপনগর ও তার আশেপাশের এলাকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় সেন্টু চেয়ারম্যানকে হত্যা করে আসামিরা। চেয়ারম্যান চাচাকে হত্যা মামলার সাক্ষী আমি। যে কারণে আমাকেও হত্যার চেষ্টা করা হয়।
আমাকে বেধড়ক মারধর ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে। আল্লাহ আমাকে বাচিয়ে দিয়েছে। আমাকে হত্যাচেষ্টা ও চেয়ারম্যান হত্যা মামলার আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
নিহত চেয়ারম্যানের ভাতিজা শিহাবুল ইসলাম বলেন, সেন্টু চেয়ারম্যান হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানানোর কারণে আসামিরা জাহাঙ্গীর সরকারকেও হত্যার চেষ্টা করে। তাকে কুপিয়ে ও মারপিট করে গুরুতর আহত করেছে। চেয়ারম্যানকে হত্যা ও তার ভাতিজা জাহাঙ্গীরকে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় যারা জড়িত তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। হত্যা মামলার আসামি হয়েও এলাকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে নাহারুল, শুখচাঁন, মিজান, সিদ্দিক, গিট্টু সোহাগ, রুশমন, বিপ্লব, মামুন, মেরু, আক্তারুল, সালাম সহ তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর লোকজনরা। তাদের মধ্যে শুকচান ও নাহারুল হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামী। তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। তাদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানাচ্ছি।
জানা গেছে, ৩০ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জেরে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ইউপি চেয়ারম্যান নইমুদ্দিন সেন্টুকে এলোপাতাড়ি গুলি করে প্রতিপক্ষের টুকু বাহিনীর লোকজন। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলিবিদ্ধ হয়। এতে সেন্টু চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলেই মারা যান।
এ ঘটনায় ০১ অক্টোবর নিহত চেয়ারম্যানের ছেলে আহসান হাবীব কনক বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় মামলা করেন। এতে টুকুকে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়া মামলায় মোট ১০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৮-১০ জনকে। এ মামলার আসামি টুকু, নায়িম, লিটন ও হৃদয়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেননি পুলিশ।
গণ-আন্দোলনের কারণে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের ফিলিপনগর এলাকায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে টুকু বাহিনী। তরিকুল ইসলাম টুকুর নেতৃত্বে ওই অঞ্চলে হাটঘাট দখল, লুটপাট, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, অস্ত্র ব্যবসা, প্রতিপক্ষের লোকজনের ওপর হামলা, হুমকি-ধামকিসহ নানা অপরাধ শুরু হয়।
তাদের এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আসে ফিলিপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নইমুদ্দিন সেন্টুর কাছে। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ ও সতর্ক করেছিলেন তিনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে টুকু বাহিনীর লোকজন পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ইউপি চেয়ারম্যান সেন্টুকে গুলি করে হত্যা করে। এছাড়াও অনেক আগে থেকেই আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জেরে তাদের দুপক্ষের বিরোধ ছিল।
এদিকে নিহত নইমুদ্দিন সেন্টু ফিলিপনগর বাজারপাড়ার মুতালিব সরকারের ছেলে। তিনি অনেক আগে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। একসময় উপজেলা বিএনপির সহসভাপতিও ছিলেন। তিনবার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
এবিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আউয়াল কবীর বলেন, চেয়ারম্যান হত্যা মামলার কয়েকজন আসামি গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে। হত্যা মামলার সাক্ষীকে হত্যা চেষ্টা করেছে আসামিরা। শুনেছি আসামিরা ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল। তারা ভারত থেকে এসেই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে৷ এ ঘটনার খবর পাওয়ার পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছিল। ওই এলাকায় পুলিশের কয়েকটি টিম কাজ করছে। তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছে।
আরও পড়ুন: