বৃহস্পতিবার

১ মে, ২০২৫
১৮ বৈশাখ, ১৪৩২
৪ জিলক্বদ, ১৪৪৬

কৃষকদলের মিছিলে মুজিববাদী কলেজ শিক্ষক লালমুদ্দিন, ফেসবুকে তোলপাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১৭:৩২

শেয়ার

কৃষকদলের মিছিলে মুজিববাদী কলেজ শিক্ষক লালমুদ্দিন, ফেসবুকে তোলপাড়
কোলাজ: বাংলা এডিশন

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের আওয়ামী পন্থি কলেজ শিক্ষক লালমুদ্দিন সম্প্রতি উপজেলা কৃষক দলের এক মিছিলে অংশ নেয়ার ছবি ও ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠে। তিনি উপজেলার ঝিটকা খাজা রহমত আলী কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।

২৫ জানুয়ারি (শনিবার) সন্ধ্যায় ওই কলেজ শিক্ষকের শেখ মুজিবের ছবির পাশে দাঁড়ানো একাধিক ছবি ও কৃষকদলের নেতাদের সাথে মিছিলে অংশ নেয়া ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়। এতে করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি পন্থি অনেক নেতাকর্মীদের ওই পোস্টে কমেন্ট করতে দেখা যায়। এছাড়াও এমপিও ভুক্ত কলেজ শিক্ষক হয়ে সরাসরি একটি রাজনৈতিক দলের মিছিলে কিভাবে অংশগ্রহণ করেন তা নিয়েও জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, ২৪ জানুয়ারি (শুক্রবার) বিকেলে উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নে ইউনিয়ন কৃষকদলের এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমাবেশে কেন্দ্র থেকে আসা নেতৃবৃন্দদের রিসিভ করতে ঝিটকা- মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের গোয়ালবাগ এলাকায় উপজেলার কৃষকদলের নেতৃবৃন্দ জমায়েত হয়। সেখানে ফটো সেশন শেষে জেলা কৃষকদলের সহসভাপতি, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন ওরফে ভিপি দুলালের নেতৃত্বে মিছিলে অংশ নেন মুজিববাদী কলেজ শিক্ষক লালমুদ্দিন। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিএনপি পন্থি নেতাসহ অন্যান্যরাও তীব্র সমালোচনা করে কমেন্ট করেন।

কমেন্টে মানিকগঞ্জ জেলা কৃষকদলের সাবেক সদস্য শফিকুল ইসলাম খান বাদল লিখেছেন, "যখন দলের দূর সময় ছিল তখন হরিরামপুর থানার কৃষকদলের কমিটি দেওয়ার মতো কোন লোক পাওয়া যায় নাই আর এখন লোকের ভিড়ে আমরাই থাকতে পারিনা। হায়রে রাজনীতি!!!"

হরিরামপুর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন লিখেছেন, "পট পরিবর্তন হতে না হতেই দলে দালালে ভরে গেছে। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই মুজিববাদী দালালদের বিষয়ে সর্তক থাকতে হবে। বির্তকিত শিক্ষক লালমুদ্দিন যেন দলে কোনোভাবেই জায়গা নিতে না পারে এবং দল কলংকিত না হয়, সেদিকে সিনিয়র নেতৃবৃন্দদের প্রতি বিশেষ অনুরোধভাবে রইল। "

মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি এসকে মিজানুর রহমান লিখেছেন, "দালালদের চামড়া তুলে নিব আমরা।" তুহিন নামের একজন লিখেছেন, "চরিত্রহীন লাল্লু একজন আওয়ামী দালাল ওরে কোন দলে নেওয়া মানে সেই দলের ধ্বংস অনিবার্য।"

মহিউদ্দিন লাভলু লিখেছেন, "বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল আর কত লজ্জিত হবে। জানার আগ্রহ জেলা বিএনপির কাছে। আশা করবো তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।"

কলেজ শিক্ষক লালমুদ্দিনের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুজিববাদী থেকে জিয়াবাদীতে আর্বিভূত এই কলেজ শিক্ষক লালমুদ্দিন উপজেলা চালা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত মহিউদ্দিনের ছেলে। তিনি ঝিটকা খাজা রহমত আলী কলেজে শিক্ষকতা অবস্থায় আইরিন আক্তার নামের একছাত্রীর সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন।

২০২৪  সালের ৯ জানুয়ারি দিবাগত রাতে সিংগাইর উপজেলার ছোট বরুন্ডি গ্রামে আইরিন আক্তার তার শ্বাশুড়ি তহুরা বেগমকে হত্যা করেন। পরের দিন ১০ জানুয়ারি সকালে তহুরা বেগমের ছোট ভাই মামুন হোসেন বাদি হয়ে সিংগাইর থানায় আইরিন আক্তারকে এক নম্বর আসামী ও তার পরকীয়া প্রেমিক শিক্ষক লালমুদ্দিনকে হত্যার প্ররোচনাকারী হিসেবে দুই নম্বর আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় চলতি বছরের গত ২০ জানুয়ারি শিক্ষক লালমুদ্দিনকে ডিসচার্জে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন জেলার নিম্ন আদালত। আইরিন আক্তার এখনও জেল হাজতে।

২০২৪ সালে ৫ আগস্ট ছাত্র- জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী সরকারের পতন হলে জেলা কৃষক দলের সহসভাপতি দেলোয়ার হোসেন ওরফে ভিপি দুলালসহ গুটি কয়েক বিএনপি নেতাদের সাথে শিক্ষক লালমুদ্দিনের সখ্যতা গড়ে ওঠে। যা দলীয়ভাবে অন্যান্য নেতারা বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেননি বলে দলীয় একাধিক নেতা দাবি করে বলেন।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক সায়মুন চৌধুরী জানান, কৃষক দলের মিছিল মিটিংয়ে বিষয়ে আমার সাথে কোনো সমন্বয় নাই। এ ব্যাপারে আমার আর কোনো মন্তব্য নেই।

banner close
banner close