
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্তে সম্প্রতি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর উগ্র আচরণ এবং সীমান্তবাসীর ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এসব ঘটনার প্রতিবাদে শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগণ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।
বুধবার বিকাল ৪টায় শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের কালিগঞ্জ বউ বাজারে কয়েক শতাধিক মানুষ এই মানববন্ধনে অংশ নেন। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ধর্মান্ধ উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিএসএফ সদস্যরা সীমান্তে বসবাসকারী নিরীহ বাংলাদেশীদের প্রতিনিয়ত অমানবিক আচরণ ও হামলার টার্গেটে পরিণত করছে।
গত ১৮ই জানুয়ারি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের সীমানায় আম গাছ কেটে ফেলা, জমির ফসল নষ্ট করা এবং সাধারণ কৃষকদের উপর, পাথর, তীর, ককটেল ও বোমা নিক্ষেপের ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এতে কয়েকবার বিজিবি ও বিএসএফের পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হলে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। বক্তারা আরও উল্লেখ করেন, বিএসএফ ও ভারতীয় জনগণ নিয়মবহির্ভূতভাবে সীমান্তের নিকটবর্তী এলাকার কৃষকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে।
মানববন্ধনে বক্তারা বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, দ্রুত এই বিষয়ে কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়ার এবং সীমান্তে বসবাসরত মানুষদের জান ও মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার। মানববন্ধন ও প্রতিবাদ মিছিলে কৃষক, ব্যবসায়ী এবং শিক্ষার্থী সহ এলাকার সর্বস্তরের জনগণ অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধন শেষে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়, যা সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে। মিছিল থেকে বিএসএফ-এর অমানবিক কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানানো হয়।
উল্লেখ্য, কিরণগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফ-এর এমন আচরণ নতুন নয়। এর আগেও সীমান্ত এলাকায় এই ধরনের হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, যা সীমান্তবাসীর মধ্যে চরম আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। সীমান্তবাসীরা আশা করছেন, সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এদিকে দুই দেশের বিজিবি ও বিএসএফের কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিজিবির পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে শিবগঞ্জ সীমান্তে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বুধবার সকাল ১০টায় ৫৯ বিজিবি'র মহানন্দা ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় সোনামসজিদ বিওপির সম্মেলন কক্ষে সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সাক্ষাতে বিজিবির পক্ষে নেতৃত্ব দেন কর্নেল মোঃ ইমরান ইবনে এ রউফ, সেক্টর কমান্ডার বিজিবি, রাজশাহী এবং বিএসএফ এর পক্ষে নেতৃত্ব দেন ডিআইজি অরুণ কুমার গৌতম, মালদা সেক্টর।
এছাড়াও উক্ত সম্মেলনে লে: কর্নেল, গোলাম কিবরিয়া, বিজিবিএম, বিজিওএম, অর্ডন্যান্স, অধিনায়ক, মহানন্দা ব্যাটালিয়ন (৫৯ বিজিবি) এবং স্টাফ অফিসার এবং বিএসএফের পক্ষে ১১৯ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক সুরজ সিং এবং বিএসএফ এর স্টাফ অফিসারগণ উপস্থিত ছিলেন।
উক্ত সৌজন্য সাক্ষাতে উভয়পক্ষ সীমান্ত সম্পর্কিত বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা করে নিম্নোক্ত সিদ্ধান্তগুলিতে উপনীত হয়েছেন। সিদ্ধান্তগুলো হলোঃ
ক. সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে বাংলাদেশী এবং ভারতীয় কৃষক ব্যতীত অন্য কেহ প্রবেশ করবে না।
খ. সীমান্তে সংক্রান্ত যে কোন সমস্যা বিজিবি এবং বিএসএফের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমন্বিতভাবে সমাধান করা হবে।
গ. উভয় দেশের মিডিয়া কর্তৃক সীমান্ত সম্পর্কিত যেকোন ধরনের অপপ্রচার কিংবা গুজব ছড়ানো যাবে না।
ঘ. উভয় দেশের স্থানীয় জনগণকে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও মাদক চোরাচালান হতে বিরত থাকতে হবে।
পরিশেষে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সৌজন্য সাক্ষাৎ সম্পন্ন হয় বলে নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের নিকট প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন ৫৯ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া, বিজিবিএম, বিজিওএম।
আরও পড়ুন: