শুক্রবার

২ মে, ২০২৫
১৯ বৈশাখ, ১৪৩২
৪ জিলক্বদ, ১৪৪৬

সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্ক ঝুলে আছে প্লট বরাদ্দ: উদ্যোক্তারা হতাশ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১৬:৩২

শেয়ার

সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্ক ঝুলে আছে প্লট বরাদ্দ: উদ্যোক্তারা হতাশ
বিসিক শিল্প নগরী। বাংলা এডিশন

দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা শেষ হওয়ার পরও বহু প্রতীক্ষিত সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্প পার্কের প্লট বরাদ্দ কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। ফলে অপেক্ষাকৃত সম্ভাব্য অনেক উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন ঝুলে রয়েছে। সেই সাথে সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচকৃত নির্মানাধীন দেশের বৃহত্তম বিসিক শিল্পপার্ক থেকে প্রত্যাশিত সুবিধা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তাও দেখা দিয়েছে উদ্যোক্তাদের মধ্যে ।

যদিও বলা হয়েছিল শিল্পপার্কটি নির্মাণ হলে সেখানে কলকারখানা গড়ে উঠলে এক লক্ষ বেকার যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কিন্তু তা কবে হবে এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্ক ছিল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার ৭১৯ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ের একটি উল্লেখযোগ্য মেঘা প্রকল্প। কয়েক দফায় সময় বৃদ্ধির পর বিসিক শিল্পপার্কের বাস্তবায়ন কার্যক্রম গত বছরের ৩০ জুনের মধ্যে কাগজে কলমে 'শেষ দেখানো হলেও বিসিকের প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের পদায়নসহ বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় প্লট বরাদ্দসহ অন্যান্য উন্নয়ন কার্যক্রম অনেক দিন যাবত ঝুলন্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কবে নাগাত প্লট বরাদ্দ কার্যক্রম শুরু হবে বলতে পারছে কোন সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিবর্গ।

এদিকে সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্কের প্রকল্প পরিচালক (পিডি)। জাফর বায়েজিদের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাকে রাজশাহীতে বিসিক আঞ্চলিক কার্যালয়ের আঞ্চলিক পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এর আগে ২০২৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর এক অফিস আদেশে বিসিকের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত ‘মুন্সীগঞ্জ প্রিন্টিং ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটি’ প্রকল্পের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। কয়েকদিন পরই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক দুর্নীতি ও অসঙ্গতির অভিযোগের মুখে তার পোস্টিং স্থগিত করা হয়।

মুন্সীগঞ্জ প্রকল্প থেকে সরে যাওয়ার পর জাফর বায়েজিদ তার আগের কর্মস্থলে ফিরে যেতে বাধ্য হন। কিন্তু তিনি অন্য কোনো পদোন্নতি পেতে তদবির চালিয়ে যান। কয়েক মাসের প্রচেষ্টার মধ্যে তিনি রাজশাহী আঞ্চলিক অফিসের আঞ্চলিক পরিচালক হিসাবে আরেকটি পদোন্নতির মাধ্যমে আবারও সোনার হরিণ দখল করেন। জাফর বায়োজিদ এরই মধ্যে  রাজশাহীতে তার নতুন কর্মস্থলে যোগদান করলেও, তিনি এখন পর্যন্ত সদ্য পদায়ন হওয়া কর্মকর্তা মাহবুবুল ইসলামের কাছে সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্প পার্কের দায়িত্ব হস্তান্তর করেননি। ফলে সিরাজগঞ্জ শিল্প পার্কের সার্বিক কার্যক্রম বর্তমানে মুখ থুবড়ে  পড়ে রয়েছে।

'শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতুর পশ্চিম পাশে সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার ছাতিয়ানতলী, পশ্চিম মোহনপুর, বনবাড়িয়া, বেলটিয়া ও মোরগ্রাম মৌজার অংশ নিয়ে প্রায় ৪০০ একর জমিতে বিসিক শিল্পপার্কটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কয়েক দফায় সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি করতে করতে সর্বশেষ প্রকল্পটি ব্যয় ধরা হয় ৭১৯ কোটি ২১ লক্ষ টাকা। শিল্প পার্কের ৮২৯টি প্লটে কমপক্ষে ৫৭০টি শিল্প স্থাপনের কথা রয়েছে। প্লট বরাদ্দের প্রেক্ষাপটে দেশীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের পাশাপাশি রপ্তানি-আমদানিমুখী শিল্প স্থাপনে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্লট বরাদ্দের অগ্রগতি বিলম্বের কারণে দেশ-বিদেশের অনেক উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন প্রায় দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। অনেকেই প্লট নিতে মুখ ফেরিয়ে নিচ্ছেন আবার অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।

আরো জানা গেছে,প্রাথমিক পর্যায়ে চার বছরের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার কথা থাকলেও প্রকল্প পরিচালক জাফর বায়েজিদ ঠিকাদারদের সাথে  যোগসাজশে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে অবশেষে চৌদ্দ বছরের মাথায় অথ্যাৎ ২০২৪ সালের ৩০ জুন কাজের সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। অভিযোগ রয়েছে যে, প্রকল্প পরিচালক জাফর বায়োজিদ তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (আরসিসি)। সাবেক মেয়র এএইচএম কায়রুজ্জামান লিটনের প্রভাব খাটিয়ে কর্মক্ষেত্রে তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে গেছেন। এছাড়াও প্রকল্প পরিচালক (পিডি) জাফর বায়েজিদ ও উদ্ধর্তন কর্তাব্যক্তিদের অনিয়মের মাধ্যমে টাকা লুটপাটের কারণে প্রকল্পের ব্যয় ও সময় কয়েক গুণ বেড়েছে।

banner close
banner close