
মানিকগঞ্জের সিংগাইরে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর এর বিরুদ্ধে "লুট হওয়া উদ্ধারকৃত স্বর্ণালঙ্কার ও বৈদেশিক মুদ্রা ফেরৎ না দিয়ে বাদীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয়ভীতির অভিযোগের ঘটনায় ফেঁসে গেলেন একই থানায় কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন।
গত ১২ জানুযারি (রোববার) সকালে মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার বরাবর ওসি জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অভিযোগটি করেন উপজেলার চর আজিমপুর গ্রামের মোঃ কাজী গোলাম হোসেনের ছেলে কাজী আরিফুর রহমান। ওই দিন বিকেলেই অভিযোগ সূত্রে অনলাইন পোর্টাল বাংলা এডিশনে সংবাদ প্রকাশ হয়।
সংবাদটি মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার মোছাঃ ইয়াছমিন খাতুনের নজরে পড়লে তিনি ওই রাতেই ঘটনার তদন্ত কাজ শুরু করেন। তবে তদন্ত চলাকালীন গত ১৪ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোশারফ হোসেনকে স্ট্যান্ড রিলিজ ও পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয় বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়।
উল্লেখ্য, গত ১২ জানুয়ারি (রোববার) জেলা পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগে আরিফুর রহমান উল্লেখ করেন, তার ছোট ভাই কাজী শরিফুর রহমান (৩৪) বিগত প্রায় নয় বছর পূর্বে ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক উপজেলার চর দূর্গাপুর গ্রামের সিদ্দিক খানের মেয়ে চাদনী আক্তার (২৬) কে বিয়ে করে। দম্পত্য জীবনে তাদের সংসার রয়েছে কাজী আবদুল্লাহ্ নামের সাত বছরের এক পুত্র সন্তান। জীবন জীবিকার তাগিতে কাজী শরিফুর রহমান দীর্ঘদিন যাবৎ সৌদী আরবে কর্মরত ছিলেন।
১ জানুয়ারি তিনি একমাসের ছুটিতে বাড়িতে আসেন। তিনি বাড়ি আসার পর ৪ জানুয়ারি সকাল সাড়ে দশটার দিকে কাজী শরিফুর রহমান বাড়ীতে না থাকার সুযোগে স্ত্রী চাদনী আক্তার অজ্ঞাত এক যুবকের প্ররোচনা ও সহযোগিতায় বিদেশ থেকে স্বামীর দেয়া ৮ ভরি স্বর্ণালঙ্কার যার বর্তমান বাজার মূল্য আনুমানিক ৯,৬০,০০০/- (নয় লক্ষ ষাট হাজার টাকা) এবং কাজী শরিফুর রহমানের ব্যক্তিগত ও তার সহকর্মীদের বাড়িতে পাঠানোর টাকাসহ মোট ৪৫ হাজার রিয়াল যাহার মূল্য ১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা ও ব্যবহৃত ২টি স্মার্টফোন যার মূল্য আনুমানিক ৬০ হাজার টাকা নিয়ে ছেলে একমাত্র পুত্র সন্তান আব্দুল্লাহকে পালিয়ে যায়।
অনেক খোঁজাখুঁজি পর সন্ধান না পেয়ে অবশেষে ওই দিনই সিংগাইর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করতে গেলে ওসি অভিযোগ না নিয়ে উল্টো স্ত্রী চাদনী আক্তারকে খুন করে লাশ গুম করার অভিযোগে স্বামীর পরিবারকে গ্রেফতারের ভয়ভীতি দেখান। পুলিশকে চাদনী আক্তারের মোবাইল নাম্বার দিয়ে ট্র্যাকিং করে দেখার জন্য ওসিকে অনুরোধ করা হয়। এইভাবে নানারকম ভয়ভীতি দেখাতে দেখাতে ৫ দিন অতিবাহিত হলে ওসি জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর-এর সহযোগতিায় পুলিশ গত ৯ জানুয়ারি রাত দেড়টার সাভার থানার বিরুলিয়া পাঁচতলা একটি ভবন থেকে চাদনী আক্তারসহ তার প্রেমিক অজ্ঞাত সেই ছেলেকে আপত্তিকর অবস্থায় উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
বাদীর উপস্তিতিতেই চাদনী আক্তারের নিকট থেকে লুট করা টাকা পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করেন ওসি মোঃ জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর। ওসির বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ হওয়ার পর থেকেই অভিযোগের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়৷ থানায় সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠে।
অনুসন্ধানে বাংলা এডিশনের হাতে আসা এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, চাদনী আক্তার নামের ওই নারী ও তার অভিভাবকসহ ছেলে পক্ষের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে সাভার থেকে উদ্ধার করা ১৬ হাজার টাকা, এক জোড়া কানের দুল ও এক জোড়া নূপুর থানায় বুঝিয়ে দেয়। অপর একটি ভিডিওতে দেখা যায়, অভিযোগের পর অভিযোগকারীদের থানায় এনে জিনিসপত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে তারাও শিকার করেন সাভার থেকে উদ্ধার করা ১৬ হাজার টাকা, এক জোড়া কানের দুল ও এক জোড়া নূপুর পাওয়া গেছে বাকি বিষয়টি মেয়ে অস্বীকার করেছেন।
এখন প্রশ্ন হলো কেন এ মিথ্যা অভিযোগ? কে বা কারা এই মিথ্যা অভিযোগ করিয়েছে? তবে এই উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেন পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মোশারফ হোসেন ও এস আই মোতালেব। তবে এ বিষয়ে আরিফুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি সাবেক এমপি মঈনুল ইসলাম খান শান্তর কাছে গিয়েছিলাম। তিনি বলেছেন এ বিষয়টি নিয়ে যেন আর কিছু না হয়। যতটুকু হয়েছে আর কিছু করার দরকার নাই। আমি থানায় বলে দিতেছি। এ জন্য আমি আর এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না।
সিংগাইর থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক মোতালেব বলেন, ওসি (তদন্ত) মোশারফ হোসেন স্যার কে নিয়ে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে লোকেশন নির্নয় করে সাভারের বিরুলিয়া হতে চাঁদনীকে উদ্ধার করা হয়। পরে তার সাথে থাকা নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার তার গার্ডিয়ানের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়। তবে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ মোশারফ হোসেনের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, তাকে আমাদের থানা থেকে সরিয়ে পুলিশ লাইনস এ নেয়া হয়েছে। তবে কোন কারণে তা জানিনা।
তবে সিংগাইর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল ইসলাম ওরফে জাহাঙ্গীর জানান, এ থানায় যোগদানের পর একটি মডেল থানায় পরিণত করতে সততা ও ন্যায়ের সাথে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। চুরি-ডাকাতি রোধসহ অন্যান্য সামাজিক কাজকর্ম যেমন নাগরিক কমিটি, সভা-সেমিনার এবং প্রত্যেক ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে স্থানীয়দের নিয়ে মতবিনিময় সভার মাধ্যমে জনগণকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরে ছোট বড় অপরাধ দমনে সফল হয়েছি। আমি থাকতে এ থানায় দালালি চলবে না, সম্প্রতি এ কথা ছড়িয়ে পড়লে দালাল শ্রেণীর টাউট-বাটপারদের চোখের বালিতে পরিণত হয়েছি। আমার বিরুদ্ধে কাজী আরিফুর রহমানের এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একদল কু-চক্র মহল তাদের স্বার্থ হাছিল না হওয়াতে আমার বিরুদ্ধে এ মিথ্যা অভিযোগ ছড়াচ্ছে। আল্লাহ্পাক এসব অপরাধী দালাল চক্রের নিধন করবেই ইনশাল্লাহ।
অভিযোগের তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে, পুলিশ সুপার মোছাঃ ইয়াছমিন খাতুন জানান, "আমাদের তদন্ত কাজ এখনও শেষ হয়নি। শেষ হলে মন্তব্য করা যাবে না। তাতে তদন্তের ব্যাঘাত ঘটবে। তদন্ত শেষ হলে জানাব।" পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ মোশারফ হোসেনের ক্লোজড এর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এটা আমার একটা নিজস্ব কৌশল। আমি এক জায়গার অফিসারকে আরেক জায়গায় দিব। এ আমার নিজস্ব একটা প্ল্যানের অংশ। এটা অন্য কোনো কিছু না। আমি এটা অনেক জায়গাতেই করছি। অনেক প্ল্যান আছে। সে প্ল্যানের এটা একটা অংশ।
আরও পড়ুন: