শুক্রবার

২ মে, ২০২৫
১৯ বৈশাখ, ১৪৩২
৪ জিলক্বদ, ১৪৪৬

বাংলা এডিশনে সংবাদ প্রকাশ; সুরমার পাশে উপজেলা প্রশাসন

জিহাদ হোসেন রাহাত, লক্ষ্মীপুর

প্রকাশিত: ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫ ২১:৩৭

শেয়ার

বাংলা এডিশনে সংবাদ প্রকাশ; সুরমার পাশে উপজেলা প্রশাসন
উপহার সামগ্রির সাথে সুরমা ও তার স্বামী। ছবি: বাংলা এডিশন

‘হোগলা পাতার ঘরে কষ্টের সংসার সুরমার’ শিরোনামে বাংলা এডিশনে সংবাদ প্রকাশের পর সেই সুরমার পাশে দাঁড়িয়েছে রায়পুর উপজেলা প্রশাসন।

মঙ্গলবার সরকারি উপহার সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয় সুরমার দোরগোড়ায়।

উপজেলা প্রশাসনের এক বান্ডিল টিন ও তিন হাজার টাকার চেক পেয়ে সুরমা বলেন, সরকারি বরাদ্দের টিন পেয়েছি। সরকারকে ধন্যবাদ। আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছি। উপকার হয়েছে।

তাছাড়া এদিন প্রশাসনের তরফ থেকে বিভিন্ন সময় ক্ষতিগ্রস্ত ২০টি পরিবারের মাঝে বিনামূল্যে ২৮ বান্ডিল ঢেউটিন ও ৩ হাজার টাকা করে নগদ চেক বিতরণ করা হয়েছে।

এর আগে গত ২৩ ডিসেম্বর বাংলা এডিশনে লেখা হয়- লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে বসবাস করা সুরমা- স্বামী, তিন সন্তান ও শ্বশুর-শাশুড়িসহ ৭ জনের এই পরিবারটির সবার বসবাস হোগলা পাতার তৈরি জীর্ণশীর্ণ একটি ঘরে।

ঘর তো নয় যেন পাখির বাসা সেটি। এক খাটে ঘুমান পাঁচজন। মাটিতে বিছানা পেতে বাকি দুজন কোনো রকমে কাটান রাত।

সুরমার বসতঘরটি রায়পুর উপজেলার চরাঞ্চলের জনপদ উত্তর চরবংশী ইউপির চরঘাঁসিয়া গ্রামের চান্দার খাল এলাকায়। খালের পশ্চিম পাড়ে হোগলা পাতার ঘরে সুরমা-কামালের ছোট্ট এই কষ্টের সংসার।

কামাল পেশায় একজন জেলে। তার উপার্জনে কোনোমতে টিকে আছে সংসারটি। স্বল্প আয়ের কামালের সংসারে পড়েছে মা হাজেরা বেগম ও বাবা মরণ আলীর ভরণপোষণের দায়িত্ব। বছর বাইশের সুরমার সংসারের সদস্যরা অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটালেও দেখার নেই কেউ। আওয়ামী সরকারের আমলে এক নেতাকে টাকা দিতে না পারায় সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরও জোটেনি তাদের।

দুই মেয়ে, এক ছেলে ও বাবা-মাকে নিয়ে কামাল-সুরমা যে কত কষ্টে দিনাতিপাত করছেন সেটি তাদের বসবাসের ঘরটি দেখলেই বোঝা যায়। টাকার অভাবে ছয় বছর বয়েসী কন্যা শিশু সুমির পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পারছেন না তারা। তিন বছর বয়সী ছোট্ট শিশু সুমনের শরীরে নেই পরিধানযোগ্য একটি জামা-প্যান্ট। একই হাল তাদের চার বছরের মেয়ে সুরাইয়ার।

যে ঘরে ঘুমান সেটিকেই ব্যবহার করেন রান্নাঘর হিসেবে। পরিবারটির নেই স্বাস্থ্যসম্মত পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা। রোগশোকে জর্জরিত হয়ে দিন কাটছে পরিবারের নব্বই বছর বয়সী বৃদ্ধ মরণ আলী ও সত্তর বছরের বৃদ্ধা হাজেরার।

মনের ভেতরকার কষ্ট উগড়ে দিয়ে কামাল বলেন, হোগলা পাতাডি নদীর থেকে জোগাড় কইরা আইন্না ঘরডা বানাইছি (হোগলা পাতাগুলো নদী থেকে এনে ঘরটা বানিয়েছি)। মাছ ধরনের কামে যাই (মাছ ধরার কাজে যাই)। দিনমজুরি কইরা কামাই কইরা আইন্না খাই (দিনমজুরি করে এনে খাই)। কারে কমু দুঃখের কতা (কাকে বলবো দুঃখের কথা)। কেওই ত দেহে না আমগরো (আমাদেরতো কেউ দেখে না)।

বার্ধক্যের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত কামালের মা হাজেরা বেগম বলেন, দ্যাশ স্বাধীনের সময় কচুও খাইছি (দেশ স্বাধীনের সময় কচু খাইছি)। অনও হোলাহাইন লই কষ্ট করি (এখন ছেলেমেয়ে নিয়ে কষ্ট করি)। কোনো কূলের লাগু হাইতে আছি না (কোনো কূল পাচ্ছিনা)। অভাবই আমগো কাছে।

এখন সরকারি সহযোগিতা পেয়ে হাসি ফুটেছে পরিবারটির সকলের মুখে। এই উপহার পেয়ে তারা রায়পুর উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি ধন্যবাদ জানিয়েছে বাংলা এডিশনকে।

banner close
banner close