
মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার জামশা ইউনিয়নের ছোট বরুন্ডী গ্রামের আলোচিত হত্যাকাণ্ড তহুরা হত্যা মামলায় একে একে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। গৃহবধূ আইরিন আক্তারের বিয়ের একমাস যেতে না যেতেই তার সাথে হরিরামপুরের ঝিটকা খাজা রহমত আলী কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মো. লালমুদ্দিনের পরকীয়া প্রেমের কাহিনী ফাঁস হয়। মূলত তাদের প্রেমকাহিনীর ঘটনা চাপা দিতেই খুন করা হয় তহুরা বেগমকে। এমনটিই দাবি করেন আইরিন আক্তারের স্বামী মালয়েশিয়া প্রবাসী রাসেল বিশ্বাস।
রাসেল ও আইরিনের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মালয়েশিয়া প্রবাসী সিংগাইর উপজেলার জামশা ইউনিয়নের ছোট বরুন্ডি গ্রামের সোনামুদ্দিন বিশ্বাসের বড় ছেলে রাসেল বিশ্বাস। তিনি জীবনজীবিকার তাগিদে প্রায় ১০ বছর যাবৎ মালয়েশিয়ায় কর্মরত আছেন। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ছয় মাসের ছুটিতে বাড়ি আসেন তিনি। রাসেল বিশ্বাস বাড়িতে আসার পর তাদেরই আত্নীয় তহুরা বেগমের মামাতো ভাইয়ের মেয়ে আইরিন আক্তারের সাথে ছেলের বিয়ে ঠিক করেন তহুরা বেগম।
ওই বছরের ১৩ অক্টোবর ২ লক্ষ টাকার দেনমোহরে তাদের বিয়ে হয়। কিন্তু বিধি বাম। বিয়ের একমাস যেতে না যেতেই স্বামী রাসেল বিশ্বাসের কাছেই ছাত্রী আইরিন আক্তার ও শিক্ষক লালমুদ্দিনের হোটসআপে মেসেজ আদান প্রদানের মাধ্যমে পরকীয়া প্রেমের বিষয়টি ধরা পড়ে । এরপর থেকেই শুরু হয় রাসেল-আইরিন দাম্পত্যের কলহ। পরে পারিবারিকভাবে বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে তাদের সংসার জোড়া লাগানোর চেষ্টা করা হয়।
পরে ২০২৪ সালের ২ জানুয়ারি রাসেল বিশ্বাস আবার কর্মস্থলে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। তারপরেই আবারো আর্বিভাব ঘটে আইরিন-লালমুদ্দিনের পরকীয়া প্রেমলীলা। এর ফলে ২০২৪ সালের ৯ জানুয়ারি রাতে পরকীয়া প্রেমিক শিক্ষক লালমুদ্দিন, প্রেমিকা আইরিন আক্তারের সাথে দেখা করতে তার শ্বশুড় বাড়ি ছোট বরুন্ডি গ্রামে যান। তাদের দুজনকে এক ঘরে দেখতে পান রাসেলের মা তহুরা বেগম। এতে করে নিজেদের প্রেমলীলা ঢাকতে হত্যা করা হয় তহুরা বেগমকে।
এ ঘটনায় পরের দিন ১০ জানুয়ারি সকালে সিংগাইর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন তহুরা বেগমের ছোট ভাই মামুন হোসেন। মামলায় ১ নম্বর আসামী করা হয় ছাত্রী আইরিন আক্তারকে আর ২ নম্বর আসামী করা হয় প্রেমিক শিক্ষক লালমুদ্দিনকে। মামলায় আইরিন আক্তার বর্তমানে জেল হাজতে থাকলেও উচ্চ আদালত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে বের হন শিক্ষক লালমুদ্দিন। মামলাটি বর্তমানে আদালতে শুনানি চলমান রয়েছে।
এ বিষয়ে আইরিন আক্তার স্বামী মালয়েশিয়া প্রবাসী রাসেল বিশ্বাস এ প্রতিবেদককে মুঠোফোনে জানান, ‘বিয়ের এক মাস পরেই আইরিন ও তার কলেজ শিক্ষক লালমুদ্দিনের পরকীয়া প্রেমের কাহিনী আমার কাছে ধরা পড়ে। লালমুদ্দিনের পাঠানো মেসেজ দেখেই বুঝতে পারি, তাদের সম্পর্ক কতটা গভীর। শিক্ষক লালমুদ্দিন মেসেজে এমন বিশ্রী ভাষা লিখেছে, যা একজন স্বামীও তার স্ত্রীকে এভাবে মেসেজ লিখে না। তার এক সপ্তাহ পরেই খবর পাই শিক্ষক লালমুদ্দিন ও আইরিন দুইজনে মিলে আমার গর্ভধারিনী মাকে হত্যা করেছে। আমি রাষ্টের কাছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’
তবে জেল হাজত থেকে আইরিন আক্তারের এক কল রেকর্ডে জানা যায়, পরকীয়া প্রেমিক শিক্ষক লালমুদ্দিন তাকে বিভিন্নভাবে ব্লাকমেইল করে তার সাথে শারিরীক সম্পর্ক করার চেষ্টা করতেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিতেন। হত্যাকাণ্ডের ওই রাতে তহুরা বেগমকে লালমুদ্দিনই টর্চ লাইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে এবং আইরিন আক্তারকে হুমকি দেয় যাতে তার নাম প্রকাশ না করে।
আরও পড়ুন: