শুক্রবার

২ মে, ২০২৫
১৯ বৈশাখ, ১৪৩২
৪ জিলক্বদ, ১৪৪৬

লক্ষ্মীপুরের মুখরিত সেই গণপাঠাগার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১৬:০৫

শেয়ার

লক্ষ্মীপুরের মুখরিত সেই গণপাঠাগার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া
ছবি: সংগৃহীত

লক্ষ্মীপুরের সর্বাধিক পাঠক সমাগমের গণপাঠাগারটি বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের আনাগোনায় মুখরিত সেই পাঠাগার আজ নিষ্প্রাণ। জেলার রায়পুর উপজেলার একমাত্র পাবলিক লাইব্রেরি (গণপাঠাগার) বন্ধ করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য ভাড়া দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে বিগত প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে পাঠাগারটি। নির্মাণকাজ চলায় সরিয়ে নেয়া হয়েছে সব বই। পাঠাগারের একতলা ভবনটিতে এক সপ্তাহ ধরে চলছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালুর প্রস্তুতি।

শিক্ষার্থীদের পদচারণয় মুখরিত এই পাঠাগার বন্ধ করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। উপজেলা প্রশাসন দাবি করছে, একতলা ভবনটি দ্বিতল করা হচ্ছে। নিচতলা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেয়া হলেও দ্বিতীয় তলায় পুনরায় লাইব্রেরির কার্যক্রম শুরু করা হবে।

শহরের উপকন্ঠে উপজেলা পরিষদ সড়কে রায়পুর সরকারি মার্চেন্টস একাডেমির সামনে সরকারি জমিতে ২০২২ সালে লাইব্রেরি ভবনটি নির্মাণের কাজ শুরু করে উপজেলা প্রশাসন। স্থানীয় ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সহযোগিতায় ও সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা দিয়ে পাঠাগার ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেন তৎকালীন রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অঞ্জন দাস। প্রায় ৯০০ বর্গফুট জমিতে গড়ে তোলা ভবনটি ২০২৩ সালের ৩ জানুয়ারি উদ্বোধন করেন সে সময়কার জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসাইন আকন্দ।

জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধনের দিন থেকেই বইপ্রেমী পাঠকেরা এই গণপাঠাগারটি নিয়মিত ব্যবহার করে আসছেন। পাঠাগার পরিচালনার দায়িত্বে একজন গ্রন্থাগারিক নিয়োগ দেয়া হয়। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রায়পুর শহরে নির্মাণ করা হয় চারটি দোকান, যেসব দোকানের ভাড়া থেকে পাওয়া টাকায় পাঠাগারের পরিচালনা ব্যয় মেটানোর কথা থাকলেও তা হচ্ছে না।

এ বিষয়ে রায়পুরের সাবেক ইউএনও অঞ্জন দাস বলেন, ‘পাঁচ হাজার বই দিয়ে পাঠাগারটির যাত্রা শুরু হয়। উদ্বোধনের পর প্রতিদিন শতাধিক পাঠক এখানে বই পড়তে আসতেন।’

গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বদলি হওয়ার আগে পাঠাগারটির জন্য ছয় লাখ টাকা তহবিলে রেখে আসেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

রোববার সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, লাইব্রেরি ভবনটির দ্বিতীয় তলার কাজ প্রায় সিংহভাগ শেষ হয়েছে। নিচতলায় বই রাখার শেলফগুলো এক স্থানে জড়ো করে রাখা হয়েছে। শেলফের কোনোটিতেই বই নেই। চারজন শ্রমিক সেখানে ভবনের জানালা ইট দিয়ে বন্ধ করার কাজ করছেন।

বাংলা এডিশনের অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি আলমগীর হোসেন নামের স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা জামানত নিয়ে পাঠাগার হিসেবে ব্যবহৃত ভবনটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য ভাড়া দেয়া হয়েছে। মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। জামানাতের টাকা নেয়ার পর একতলা ভবনটি দোতলা করার কাজ শুরু করা হয়। তবে এসব কাজের জন্য আহ্বান করা হয়নি কোনো দরপত্র।

জামানত ও ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আলমগীর হোসেন বলেন, ‘গত নভেম্বর মাসে জামানতের ২০ লাখ টাকা নগদে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছেন তিনি। লাইব্রেরিতে থাকা বই সরিয়ে ভবন সংস্কারের কাজ ইউএনওর তদারকিতে হচ্ছে। সংস্কার শেষ হওয়ার পর তাকে বুঝিয়ে দেয়ার কথা রয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে আলমগীর হোসেন জানান, কোন ধরনের ব্যবসায়ের জন্য ভবনের ফ্লোরটি তিনি ব্যবহার করবেন, তা এখনো ঠিক করেননি। ওষুধের দোকান, স্যানিটারি পণ্য বিক্রি অথবা ইলেকট্রনিক পণ্য বিক্রির দোকান করার পরিকল্পনা রয়েছে তার।

স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘পাবলিক লাইব্রেরিকে এভাবে তছনছ করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালুর উদ্যোগ কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। লাইব্রেরি বন্ধ থাকায় পাঠকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। লাইব্রেরিতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হলে পাঠের পরিবেশ নষ্ট হবে।

রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরান খান বলেন, ‘লাইব্রেরি নিচতলায় ছিল। তা এখন দ্বিতীয় তলায় স্থানান্তর হবে। নিচতলা ভাড়ার টাকা দিয়ে লাইব্রেরি পরিচালনার খরচ বহন করা হবে। বেসরকারিভাবে অর্থ সংগ্রহ করে কাজ করা হচ্ছে, সেজন্য দরপত্র আহ্বানের প্রয়োজন নেই।’

পরিচালনা ব্যয় মেটাতে আগে চারটি দোকান নির্মাণের পরও কেনো নতুন করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে ভবনের নিচতলা ভাড়া দিতে হচ্ছে মর্মে জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, ‘আগে নির্মাণ করা দোকানগুলো ভাড়া হয়নি।’

banner close
banner close