শুক্রবার

২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১০ পৌষ, ১৪৩২

সিংগাইরের তহুরা হত্যা মামলা: শিক্ষকের ব্লাকমেইলের শিকার ছাত্রী আইরিন আক্তার

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১৫:০৬

শেয়ার

সিংগাইরের তহুরা হত্যা মামলা: শিক্ষকের ব্লাকমেইলের শিকার ছাত্রী আইরিন আক্তার
ছবি: সংগৃহীত

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার জামশা ইউনিয়নের ছোট বরুন্ডী গ্রামের তহুরা হত্যা মামলার ঘটনায় চার্জশিটভূক্ত ২নং আসামি হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা খাজা রহমত আলী কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মো. লালমুদ্দিনের ব্লাকমেইলের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেন নিহতের পুত্রবধূ ও মামলার প্রধান আসামী ঝিটকা খাজা রহমত আলী কলেজের ছাত্রী আাইরিন আক্তার ওরফে সাদিকা আক্তার। তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

কারাগার থেকে মোবাইল ফোনে পরিবারের সাথে কথা বলার এক কল রেকর্ড থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। কারাগারে যাওয়ার প্রায় তিনমাস পরে তিনি নিহতের পরিবারের সাথে মোবাইল কথা বলার সময় তিনি কলেজ শিক্ষক লালমুদ্দিনের ব্লাক মেইলের বিষয়টি জানান। শিক্ষক লালমুদ্দিন এই মামলায় হত্যার প্ররোচনার দায়ে ২নং আসামী।

কল রেকর্ডের সূত্রে জানা যায়, আইরিন আক্তারের পরকীয়া প্রেমিক শিক্ষক লালমুদ্দিন তাকে বিভিন্নভাবে ব্লাকমেইল করে তার সাথে শারিরীক সম্পর্ক করার চেষ্টা করতেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিতেন। হত্যাকাণ্ডের ওই রাতে তহুরা বেগমকে লালমুদ্দিনই টর্চ লাইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে এবং আইরিন আক্তারকে হুমকি দেয় যাতে তার নাম প্রকাশ না করে। তাহলে আইরিনের পরিবারকেও ক্ষতি করবে বলে তিনি হুমকি দেন। এ জন্য তিনি আদালতকে দেয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে নিজের ওপর দোষ চাপিয়ে নেয় আইরিন আক্তার।

শুক্রবার আইরিন আক্তারের মা জানান, ‘শিক্ষক লালমুদ্দিনের সাথে আইরিনের সম্পর্ক ছিল এটা আমরা কখনই বুঝতে পারিনি। বিযের প্রায় এক মাস পরে আইরিনের মোবাইলে লালমুদ্দিন মাস্টারের দেয়া বিভিন্ন মেসেজ ধরা পড়ে জামাইয়ের হাতে। সে বিষয়টি আমাদের জানালে আমরা সংশোধনের চেষ্টা করি। আইরিনও কথা দিয়েছিল সে আর এ সম্পর্কে যাবে না। কিন্তু লালমুদ্দিন মাস্টার মেসেজ দিয়ে হুমকি দিত এবং বলতো, আইরিনের পেছনে বিয়ের আগেই আমার ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আমি যেভাবে পারি এই টাকা উঠাবো। তারপরেই এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তবে বিয়ের পরে আমরা বুঝতে পারিছিলাম লালমুদ্দিন মাস্টারের সাথে আইরিনের সম্পর্ক ছিল।’

তিনি আরও জানান, ‘কলেজে পড়াশোনা অবস্থায় লালমুদ্দিন মাস্টার তার দুই বন্ধু নিয়ে একবার আমাদের বাড়িতে আসে। আর বিয়ের সময় তাকে দাওয়াত দেয় আইরিন নিজেই। তার কাছে প্রাইভেট পড়তো। ওর কলেজের শিক্ষক সে হিসেবে দাওয়াত দেয়াটা স্বাভাবিক হতেই পারে। বিয়েতে লালমুদ্দিন ও স্ত্রী দাওয়াতে আসেন এবং পরের দিন মাস্টার লালমুদ্দিন বরের বাড়ি আমাদের সাথে দাওয়াতে যাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেন। ওই দাওয়াতেও তিনি ও তার স্ত্রী আইরিনের শ্বশুর বাড়ি গিয়েছিলেন।’

পারিবারিক সূত্রে আরও জানা যায়, এসএসসি পাশ করার পরে ঝিটকা খাজা রহমত আলী কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হন আইরিন আক্তার ওরফে সাদিকা আক্তার। কলেজে ভর্তির পর হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক লালমুদ্দিনের নিকট প্রাইভেট পড়তে শুরু করে। এরপর থেকেই তারা প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হতেই তাদের নিকটতম আত্মীয় মালয়েশিয়া প্রবাসী সিংগাইর উপজেলার জামশা ইউনিয়নের ছোট বরুন্ডি গ্রামের সোনামুদ্দিন বিশ্বাসের বড় ছেলে রাসেল বিশ্বাসের সাথে ২০২৩ সালের ২৩ আগস্ট বিয়ে হয় আইরিনের। বিয়ের পরেও আইরিন ও লালমুদ্দিনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ থাকে এবং ইমুতে চ্যাট করতে থাকে। যা বিয়ের একমাস পেরিয়ে যেতে না যেতেই বিষয়টি স্বামী রাসেলের নজরে আসে তাদের ইমুর মেসেজগুলো। ইমুর মেসেজে নজরে আসতেই তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয় এবং আইরিনের পরিবারকে বিষয়টি জানায় রাসেল। আইরিন আর এ পথে যাবে না, এমন প্রতিশ্রুতিতেই ২০২৪ সালের ২ জানুয়ারি রাসেল আবার মালয়েশিয়া চলে যান।

কিন্তু ৯ জানুয়ারি দিবাগত রাতে লালমুদ্দিন মাস্টার আইরিন আক্তারের সাথে দেখা করতে বরুন্ডি গ্রামে গেলে ওই রাতেই শ্বাশুড়ি তহুরা বেগম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বলে মামলা সূত্রে জানা যায়।

১০ জানুয়ারি তহুরা বেগমের ছোট ভাই মামুন হোসেন বাদী হয়ে সিংগাইর থানায় আইরিন আক্তারকে ১নং আসামি এবং তার পরকীয়া প্রেমিক মো. লালমুদ্দিনকে ২নং আসামি করে মামলা করেন। মামলায় লালমুদ্দিনকে আইরিনের পরকিয়া প্রেমিক উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে হত্যার প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়। মামলায় ২০২৪ সালের ৩০ জুন দুইজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন জেলা গোয়েন্দা শাখার উপ-পরিদর্শক আজহারুল ইসলাম।

বর্তমানে আইরিন আক্তার কারাগারে থাকলেও প্রেমিক লালমুদ্দিন উচ্চ আদালত থেকে অর্ন্তর্বর্তীকালীন জামিনে আছেন। বর্তমানে মামলাটির শুনানী চলমান।



banner close
banner close