শুক্রবার

২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১০ পৌষ, ১৪৩২

দাম নেই ফুলকপির, নষ্ট করা হচ্ছে ক্ষেতেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১৬:৫৬

শেয়ার

দাম নেই ফুলকপির, নষ্ট করা হচ্ছে ক্ষেতেই
দাম নেই ফুলকপির।
চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গায় হাজার হাজার বিঘা জমিতে শীতকালীন সবজি ফুলকপি আবাদ করে বিপাকে পড়েছেন চুয়াডাঙ্গার কৃষকরা। ফুলকপি আবাদ করে উৎপাদন খরচের টাকাও উঠছে না কৃকদের। বাজারে দাম না থাকায় ক্ষেতেই ফুলকপি নষ্ট করছেন চাষীরা।
জেলার বিভিন্ন বাজার সুত্রে জানা গেছে, শীতের শুরুতে ফুলকপির চড়া দাম ছিলো। তবে ভরা মৌসুমে বাজারে বিপুল পরিমান ফুলকপি উঠতে থাকে, ফলে দিন দিন দামও নামে ফুলকপির। জানুয়ারির শুরুতেই চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন বাজারে ১০ টাকায় তিন পিচ ফুলকপি বিক্রি হতে দেখা যায়। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার কারণে ভ্যানে মাইকিং করেও ফুলকপি বিক্রি করতে দেখা যায়।
চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর চাহিদার তুলনায় অধিক ফুলকপি আবাদ করেছেন কৃষকরা। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ার কারণে বাজারে শীতকালীন এ সবজির দাম পড়ে গেছে।
২০২৩ সালে চুয়াডাঙ্গায় ২ হাজার ৭১৩ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের মাধ্যমে ৬২ হাজার ৩৯৯ মেট্রিক টন ফুলকপি উৎপাদন হয়। আর এই ২৩ সালের উৎপাদনকেই ২০২৪ সালে চাহিদা দেখানো হয়। ২০২৪ সালে ২ হাজার ৯৭৫ হেক্টর ফুলকপির আবাদ হয়েছে এবং উৎপাদন ৭০ হাজার ৪৪৯ মেট্রিক টন। যা চাহিদার তুলনায় ৮ হাজার ৫০ মেট্রিক টন ফুলকপি উৎপাদন হয়েছে।
কৃষক জব্বার মিয়া বলেন, এবার অনেক বেশি উৎপাদন হয়েছে। বাজারে ফুলকপি কেনার মানুষ নেই। ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে সব কপি। বাধ্য হয়েই ট্রাক্টর দিয়ে নষ্ট করেছি। পরবর্তী ফসলের জন্য মাঠ পরিষ্কার করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এবার ১০ বিঘা জমিতে ফুলকপির আবাদ করেছিলাম। প্রতি বিঘা জমিতে ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এতে প্রায় আমার তিন লাখ টাকা লোকসান হয়েছে আমার।
আব্দুল জলিল বলেন, ঋণ নিয়ে চার বিঘা জমিতে আবাদ করেছিলাম। গত বছরেও প্রতি বিঘা জমির ফুলকপি ৮০-৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এবার চার বিঘা জমির কপি ১৬ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। উৎপাদন খরচই উঠছে না। ঋণের বোঝা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় আছি।
সবজি চাষি খালিদ হাসান জানান, চলতি মৌসুমে দেড় বিঘা জমিতে ফুলকপির আবাদ করেছেন তিনি। এতে তার চারা, বালাইনাশক, সার, সেচ ও শ্রমিক বাবদ খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। তার আবাদকৃত ফুলকপি বিক্রি হবে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। এতে তার চারা কেনার খরচও উঠবে না।
জাহাঙ্গীর হোসেন নামের চাষী বলেন, এক সপ্তাহ আগে একজন পাইকারীর কাছে এক লাখ টাকায় দরদাম করে কপি বিক্রি করি। চুক্তি মোতাবেক তিনি আমাকে ২৮ হাজার টাকা বায়না করেন। গত কয়েক দিন যাবত সবজির বাজার কমে যাওয়ায় তিনি আর কপি নিতে চাচ্ছেন না। এদিকে আবার বায়নার টাকা ফেরত চেয়ে তাগাদা দিচ্ছেন। আমার ক্ষেতের সব কপি দিতে চাচ্ছি তার বায়নার টাকায়; তবুও নিতে চাচ্ছেন না।
চুয়াডাঙ্গা জেলা শীতকালীন সবজি কর্মকর্তারা বলছেন, জেলার অনেক চাষি প্রথমবার ফুলকপি চাষা করে ভালো দাম পেয়ে অধিক মুনাফার আশায় দ্বিতীয়বার ফুলকপির আবাদ করেছেন। এ কারণে জেলায় চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেড়েছে। যার ফলে বাজারে এখন দাম পাচ্ছেন না।



banner close
banner close