শুক্রবার

২ মে, ২০২৫
১৯ বৈশাখ, ১৪৩২
৫ জিলক্বদ, ১৪৪৬

দুই চিকিৎসক দিয়ে চলছে ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

সুজন মাহমুদ, রৌমারী কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১৩:২৬

শেয়ার

দুই চিকিৎসক দিয়ে চলছে ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে । বাংলা এডিশন

চিকিৎসক আছেন মাত্র দু’জন। বেশিরভাগ ওষুধ কিনতে হয় বাইরের দোকান থেকে। দীর্ঘদিন থেকে জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। চিকিৎসক সংকট থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন সেবা নিতে আসা রোগীরা। এভাবেই খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে কুরিগ্রামের রৌমারী উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।

বুধবার সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও দেওয়া হয়নি পর্যাপ্ত জনবল। অ্যানেসথিসিয়া কনসালটেন্ট থাকলেও অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে অপারেশন থিয়াটারের (ওটি) যন্ত্রাংশ। পদ থাকলেও নেই মেডিসিন, পেডিয়াট্রিক, অবস-গাইনী, কার্ডিওলজি, অফালমোলজি, সার্জারী, অর্থোপেডিক্স, নাক-কান-গলা ও স্কীন কনসালটেন্ট। এসব গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো রয়েছে ফাঁকা। জরুরি সেবার জন্য সচল নেই এক্স-রে মেশিন। ইসিজি যন্ত্র থাকলেও নেই টেকনিশিয়ান। দীর্ঘদিন ধরে অচল অবস্থায় পড়ে আছে আট্রাসনোগ্রাম মেশিন।

জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ২০১টি পদের মধ্যে ৭৮টি পদই রয়েছে ফাঁকা। এর মধ্যে ২৫ জন চিকিৎকের পদ থাকলেও রয়েছে মাত্র ২জন। নেই ডেন্টাল সার্জনও। এছাড়াও ফাঁকা রয়েছে প্রধান সহকারী কাম একাউন্ট্যান্ট ১টি, হেলথ এডুকেটর ১টি, মেডিকেল টেকনিক্যাল এসআই ১টি, মেডিকেল টেকনিক্যাল ল্যাব ২টি, মেডিকেল টেকনিক্যাল রেডিওলজি ১টি, মেডিকেল টেকনিক্যাল ডেন্টাল ১টি, স্বাস্থ্য সহকারী ৩০টি পদের মধ্যে ৪টি, মেডিকেল টেকনিক্যাল ফিলিথেরাফি ১টি, কম্পিউটার অপারেটর ১টি, কার্ডিওগ্রাফার ১টি, অফিস সহকারী কাম ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ১টি, টিবি এক লেপ্রেসী কন্ট্রোল সহকারী ১টি, গার্ডেনার ১টি, নৈশ প্রহরী ২টি, আয়া ২, ফার্মাসিষ্ট ৪টি পদের মধ্যে ৩টি, কুকমশালচী ২টি পদের মধ্যে ১টি, অফিস সহায়ক ৬টি পদের মধ্যে ৫টি, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ৫টি পদের মধ্যে ২টি, ওয়ার্ড বয় ৩টি পদের মধ্যে ২টি, হেলথ ইন্সপেক্টর ২টি পদের মধ্যে ১টি, সহকারী হেলথ ইন্সপেক্টর ৬টি পদের মধ্যে ৩টি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য একটি জেনারেটর মেশিন থাকলেও তেলের অভাবে তা থাকে বন্ধ।

রৌমারী সদর ইউনিয়নের চাক্তাবাড়ি এলাকার আবু ছাইম বলেন, তাঁর বাবাকে অসুস্থ্য অবস্থায় ভর্তি করতে নিয়ে আসেন স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে। কিন্তু ভালো কোনো চিকিৎসক না থাকায় অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন কতৃর্পক্ষ। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁর বাবাকে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এই যদি স্বাস্থ্যকমেপ্লক্সের অবস্থা তাহলে গরিব মানুষ যাবে কোথায়?

পেট ব্যাথা অবস্থায় স্ত্রীকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন চরশৌলমারী ইউনিয়নের ঘুঘুমারী এলাকার দিনমজুর মকবুল হোসেন। তিনি বলেন, তাঁকে আট্রাসনোগ্রাম করতে বলা হয়েছে বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে। তাঁর কাছে তেমন টাকা না থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েন তিনি।

অসুস্থ্য শিশু সন্তানকে চিকিৎসা নিতে এনেছিলেন সুখেরবাতি এলাকার মজনু মিয়া। তিনি বলেন, এই স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে শিশু বিশেষজ্ঞ নেই। এ কারণে তাঁর সন্তানকে বাইরের কোথাও নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তাকে।

স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগির স্বজন আবুল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসককে ডেকেও পাওয়া যায় না। আর বেশিরভাগ ওষুধ বাইরের দোকান থেকে কিনে আনতে হয়। তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ। দিন এনে দিন খাই। বিনামূল্যে চিকিৎসা পাওয়ায় আশায় এখানে আসেন গরিব মানুষ। তারপরও বাইরের দোকান থেকে ওষুধ কিনতে হয়। তাহলে সরকারি স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স থেকে লাভ কি?

কথা হয় রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন থেকে জনবল সংকট রয়েছে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তা নিরসনের জন্য উধ্বর্তন কতৃর্পক্ষের কাছে জানানো হয়েছে। ওষুধের বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে সব সময় রোগীর সংখ্যা বেশি থাকায় চাহিদা অনুযায়ি ওষুধ পাচ্ছে না।

 

 

banner close
banner close