শুক্রবার

২ মে, ২০২৫
১৯ বৈশাখ, ১৪৩২
৪ জিলক্বদ, ১৪৪৬

চাঁদপুরে অর্ধশত সুবিধাবঞ্চিত শিশু পেল নতুন ঠিকানা

চাঁদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১৬:১৪

শেয়ার

চাঁদপুরে অর্ধশত সুবিধাবঞ্চিত শিশু পেল নতুন ঠিকানা
শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে। বাংলা এডিশন

সন্তানের জন্যে পৃথিবীর সবচাইতে নিরাপদ স্থানটি হচ্ছে তার বাবা মা। সন্তানের জন্ম থেকে শুরু করে জীবন যৌবনের প্রতিটি মুহুর্তে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে বাবা মা। বাবা মা এর কাছে সন্তানের গুরুত্ব যেমন অপরিসীম তেমনই সন্তানের কাছেও বাবা মা এর গুরুত্ব সবচাইতে বড়। কিন্তু সমাজের এমনও সন্তান রয়েছে বাবা মা এর ছায়াতো দূরে থাক বাবা মা কেও অনেকে দেখতে পায়নি। অনুভব করতে পারে নি বাবা মা এর আদর ভালোবাসা।

অযত্নে অবহেলায় বেড়ে উঠা আমাদের সমাজের আশে পাশে অনেক ছোট ছোট এতিম, অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বাবা মা তো দূরে থাকুক নিজ ঠিকানাও খুঁজে পায়নি। পায়নি তাদের নিজ নিজ অধিকার। আর সেইসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করতে এবং তাদের বাবা মা এর মত আদর ভালোবাসা দিয়ে নিজ ঠিকানা এনে দিলেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন। অযত্নে অবহেলায় বেড়ে উঠা এতিম-অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত অর্ধশত শিশু পেল নতুন ঠিকানা শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে।

সরকারের নির্দেশনায় চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিনের সহযোগিতায় এবং জেলা সমাজসেবার তত্ত্বাবধানে চলতি মাসে উদ্বোধন হলো ১০০ শয্যা বিশিষ্ট সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র (বালিকা)। যেখানে অসহায় ও এতিম শিশুদের বেড়ে উঠার যেমন পেয়েছে নিজ ঠিকানা তেমন পেয়েছে সবধরণের সুবিধা। পেয়েছে নিজ অধিকার।

কথা হয় নতুন ঠিকানা পাওয়া শিশু ছোঁয়া আক্তার মীম, সামিয়া, ফাহমিদা ও রীমা আক্তারের সাথে। যাদের প্রত্যেকের বয়স ৮-১২ বছর। তারা খেলার ছলে ও মিষ্টি হাসিমুখে বাংলা এডিশনকে জানায়, এখানে সবাই আমাদেরকে আদর দেয়, খেলতে দেয় এবং পড়াশুনা করতে দেয়। আগে এসব কিছুই পেতাম না। এখানে আমাদের অনেক বন্ধু হয়েছে। আমরা একসাথে পড়াশোনা করতে পারি। ভালো লাগে এখানকার সবাইকে।

প্রতিষ্ঠানের সার্বিক প্রসঙ্গে উপ প্রকল্প পরিচালক সৈয়দা হাসিনা বেগম জানান, আমরা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শিশুকে অত্যন্ত যত্নসহকারে পরিচর্যা করে থাকি। আমরা শিশুদের নিজের সন্তানের থেকেও বেশি গুরুত্ব দেই। তাদের বেড়ে উঠার প্রত্যেকটি সময় আমরা খেয়াল রাখি যেন কোন রকমরের কমতি না হয়।

কথা হয় জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, সমাজে আসলে এমন অনেক শিশু রয়েছে যারা বাবা মা এর আদরসহ সবধরণের অধিকার থেকে বঞ্চিত। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তৈরি হওয়া এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা সেসব শিশুদের অভিভাবক পাইয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেছি।

তিনি আরো বলেন, এ প্রতিষ্ঠানে তারাই থাকতে পারবে যাদের এ সমাজে বাবা মা বা নিকটতম আত্মীয় স্বজন বেঁচে নেই। যাদের বাবা মা ছাড়াও নিকটতম আত্মীয় স্বজন রয়েছে সেসব শিশুদের আমরা তাদের নিকটকম আত্মীয়-স্বজনদের কাছে কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে দিয়ে দিবো। প্রয়োজনে আমরা তাদের কিছু দায়িত্ব নিবো। আমরা চাইবো তারা নিজ পরিবারের কারো না কারো থেকে তাদের অভিভাবকত্ব পাক।

জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন প্রতিবেদককে বলেন, আসলে আমরা চাই না সমাজে এ ধরণের প্রতিষ্ঠান থাকুক। কারণ বাবা মা এর আদর ভালোবাসা কেউ পূরণ করতে পারবে না। যার বাবা মা নেই, সে জানে তার মর্ম কি। বাবা মা ছাড়াও নিজ পরিবারের আত্মীয় স্বজনদের মাঝে থেকে বেড়ে উঠা আর পুনর্বাসন কেন্দ্রে বেড়ে উঠার মধ্যে অনেক প্রার্থক্য।

জেলা প্রশাসক আরো বলেন, সমাজের অনেক শিশু রয়েছে যারা অযত্নে অবহেলায় নিজ অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে বেড়ে উঠছে। শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করতেই সরকার সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে সুরক্ষা দিচ্ছেন। আমি বিশ্বাস করি সুবিধাবঞ্চিত পথ শিশু বা এতিম শিশুদের একটা আশ্রয়স্থল হয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে।

banner close
banner close