
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ব্যক্তিমালিকানা জায়গা দখল করে মহিষলুটী হাটে মাছের সেড নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে।
গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সেডটি নির্মাণ করছে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৩৭ লাখ ৯ হাজার ৯২৮ টাকা।
এদিকে একাধিক মামলা করে জায়গার দখল ও মাছের সেড নির্মাণ আটকাতে পারছেননা ভুক্তভোগীরা। তারা জানিয়েছেন, মহিষলুটী হাটের পেরিফেরির কোনো জায়গা নেই।
'আমাদের দান করা ৩০ শতক জায়গাতেই মহিষলুটি মাছের হাট গড়ে উঠেছে। ভুক্তভোগী আব্দুল কুদ্দুস, হাফিজুর, নাজমা খাতুন, হালিমা খাতুন, নাছিমা খাতুন, ছালমা খাতুন, আমিনা খাতুন ও হাসিনা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ‘উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর মহিষলুটী চৌরাস্তা মৎস্য ব্যবসায়ী আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সঙ্গে যোগসাজশ করে মহিষলুটী হাটের পাশে আমাদের ১৯ শতক জায়গার দখল নিয়েছেন। হাফ ওয়ালের ১টি ১৮ হাত ঘর ভেঙে দেন।’
'রেকর্ড সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁ ইউনিয়নের গোয়াল গ্রামের জাহের প্রামাণিকের ১৬৯ খতিয়ান মুলে ৬২২ দাগে ৬৩ শতক জায়গা ছিল নওগাঁ চৌরাস্তা সড়কের পাশে। জাহের প্রামাণিক মারা গেলে ওয়ারিশ সূত্রে মালিক হন তার ছেলে নুর হোসেন। পরে অ্যাওয়াজ নামা দলিল করে তার স্ত্রী উম্মে কুলছুমকে দেন। ২০০৮ সালে উম্মে কুলছুম মহিষলুটী হাটে ৩০ শতক জায়গা দান করেন। উম্মে কুলছুম মারা যাওয়ার পর বাকি ৩৩ শতক জায়গার ওয়ারিশ সূত্রে মালিক হন তার ছেলে আব্দুল কুদ্দুস ও হাফিজুর, তার মেয়ে নাজমা খাতুন, হালিমা খাতুন, নাছিমা খাতুন, ছালমা খাতুন, আমিনা খাতুন ও হাসিনা খাতুন।
ভুক্তভোগীরা আরও বলেন, নিরুপায় হয়ে সিরাজগঞ্জ আদালতে ১৪৪ ধারার মামলা করেছি। উচ্ছেদ মামলাও করেছি দেওয়ানী আদালতে। বিশেষ করে তাড়াশ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। মো. আসলাম হোসেন ১৪৪ ধারা মামলা হওয়ার পর মহিষলুটী হাটে মাছের সেড নির্মাণ স্থগিত রাখতে বলেন মহিষলুটী চৌরাস্তা মৎস্য ব্যবসায়ী আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি ও নওগাঁ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আজম আলীকে। কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে মাছের সেড নির্মাণ করছেন। মহিষলুটী চৌরাস্তা মৎস্য ব্যবসায়ী আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি ও নওগাঁ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আজম আলী বলেন, এসিল্যান্ড তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন জায়গা আমাদের দখলে। পরে আদালত রায় দিয়েছেন মাছের সেড নির্মাণ করতে বাধা নেই।
তাড়াশ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। মো. আসলাম হোসেন বলেন, ১৪৪ ধারা না মানার পর ভুক্তভোগীদের আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, উচ্ছেদ মামলার পর আদালত থেকে ১০ কর্ম দিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয় মহিষলুটী চৌরাস্তা মৎস্য ব্যবসায়ী আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি, সেক্রেটারি ও উপজেলা প্রকৌশলী, জেলা নির্বাহী প্রকৌশলকে। ১ মাস পেরিয়ে গেছে, জবাব দেয়নি।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফজুলল হক বলেন, আমি একটি টিমের সাথে আছি। আমার সাথে মাছের সেড নির্মাণের দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম আছেন। তার কথাই, আমার কথা।
উপ-সহকারী প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম বলেন, মহিষলুটী হাটের সভাপতি ও সেক্রেটারি আমাদের যেখানে জায়গা করে দিয়েছেন সেই জায়গাতে মাছের সেড নির্মাণ করা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুইচিং মং মারমা বলেন, এসিল্যান্ড এক মাসের প্রশিক্ষণে রয়েছেন। মহিষলুটী হাটে মাছের সেড নির্মাণের জায়গার বিষয়ে আদালত যে রায় দেবেন, সেভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ছাইফুল ইসলাম বলেন, অন্যের জায়গাতে এলজিইডির কাজ করার প্রশ্নই আসেনা। প্রয়োজনে মহিষলুটি হাটে মাছের সেড ছোট করে নির্মাণ করা হবে। কারণ দর্শানোর জবাব উপজেলা প্রকৌশলীকে রেডি করতে বলা হয়েছে।'
আরও পড়ুন: