
অবৈধ ড্রেজার। বাংলা এডিশন
লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলনের দরুন নদীর পাড় ভেঙে হুমকির মুখে পড়েছে কৃষি জমি। নদী তীরবর্তী গ্রাম ও কয়েক হাজার বিঘা কৃষি জমি ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসি।
শনিবার (৪ঠা জানুয়ারী ) দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, অবৈধ ড্রেজিংয়ের কারণে জেলার রায়পুর উপজেলার মেঘনা পাড়ের বিভিন্ন গ্রামের কৃষকের বিস্তৃত জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে বসতবাড়িও।
জানা গেছে, শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে দলীয় কিছু নেতা-কর্মীরা প্রভাব বিস্তার করে লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন ইউনিয়নে কৃষি জমি থেকে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চালিয়েছে। এমনকি জনপ্রতিনিধিরাও অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ওই সময়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিভিন্ন সময়ে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ড্রেজার মেশিন ভেঙে দেওয়াসহ বালু-মাটি উত্তোলনে জড়িত অনেককেই অর্থদণ্ডের পাশাপাশি কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছিলো।
জেলা প্রশাসনের কঠোর অভিযান অব্যাহত থাকায় অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিলো অবৈধ ড্রেজারে বালু উত্তোলন।
দীর্ঘদিন ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু-মাটি উত্তোলন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আবারো অবৈধ ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে একটি গোষ্ঠী। ক্ষমতার পালাবদলে শুধু চেহারা বদল হয়েছে তাদের। এই ঘটনার সাথে জড়িতরা আগে নিজেদের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী বলে দাবি করলেও ক্ষমতার পট পরিবর্তনে স্রোতে গাঁ ভাসিয়ে দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ ক্ষমতার বাহিরে থাকা নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে পুর্বের ন্যায় চালাচ্ছে নিজেদের আধিপত্য।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সদর উপজেলার চররুহিতা, চর রমনীমোহন, মজু চৌধুরীর হাট ও রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের চর জালিয়া, চর ঘাঁসিয়া, উত্তর চর আবাবিল, দক্ষিণ চরবংশীসহ বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৪০ থেকে ৫০ টি অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সিন্ডেকেটের সদস্যরা।
জেলার রায়পুর উপজেলার অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। পুরো জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এমন অন্তত ১শতাধিক ড্রেজার। রামগঞ্জ, রামগতি,কমলনগর ও সদরে আধিপত্য চালাচ্ছে অবৈধ বালু কারবারিরা।
জেলার কৃষকরা বলেন, বর্তমানে দেশের এমন পরিস্থিতি যে, এদের বিরুদ্ধে বাঁধা কিংবা প্রতিবাদ করলেই মারধরসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনিক নজরদারি নেই। আশঙ্কা প্রকাশ করে তারা আরও বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও এসব বিষয়ে জানালে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে জীবন যাপন করতে হবে। তবে এমন অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বা দেখার কেউ নেই। এভাবে চলতে থাকলে ফসল উৎপাদনের জন্য নদীতীরবর্তী এলাকায় কৃষি জমি খুঁজে পাওয়া যাবে না।
অবৈধ ড্রেজিং নিয়ে রায়পুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইমরান খাঁন বলেন, অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু যারাই তুলবে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিবে। আমরা অচিরেই অভিযানে নামবো।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্র জানায়, অতীতে অবৈধ ড্রেজিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান ছিলো। পুনরায় অবৈধ কারবারিরা যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হবে।
আরও পড়ুন: