শনিবার

৩ মে, ২০২৫
২০ বৈশাখ, ১৪৩২
৫ জিলক্বদ, ১৪৪৬

স্ব-পদে বহাল অধ্যক্ষ, নেপথ্যে উপজেলা বিএনপি  

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১৬:৪০

আপডেট: ৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১৭:৪১

শেয়ার

স্ব-পদে বহাল অধ্যক্ষ, নেপথ্যে উপজেলা বিএনপি  
ছবি: বাংলা এডিশন

শত নাটকীয়তার পর কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার চর রাজীবপুর আলীম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সাখাওয়াত হোসেনকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে স্ব-পদে বসিয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোখলেছুর রহমান। এমনটাই অভিযোগ করেছেন মাদ্রাসার শিক্ষক, প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থীরা।  

২০২৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন। তবে তিনি ওই পদে নিয়োগ পেতে নানা বাধার সম্মুখীন হন। ২০২১ সালে তৎকালীন মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই সরকার চারবার টাকার বিনিময়ে সাখাওয়াত হোসেনকে নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। অবশেষে পঞ্চমবারে থানা পুলিশের সহযোগিতায় তাকে নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়।

নিয়োগের পর মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছিলেন। তবে শিক্ষক প্রতিনিধি মোখলেছুর রহমান অভিযোগ করেন, ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্টের মহাবিপ্লবের পরদিন থেকে উপজেলা বিএনপির সভাপতির নেতৃত্বে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা তাকে মাদ্রাসায় প্রবেশে বাধা দেয়।

পরবর্তীতে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোখলেছুর রহমানের নেতৃত্বে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সাখাওয়াত হোসেনকে পুনরায় স্ব-পদে বসানো হয়। এ ছাড়া যারা আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন, তাদের বিভিন্নভাবে চাপ দিয়ে আন্দোলন থেকে সরে আসতে বাধ্য করা হয়।

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. রিয়াজুল ইসলাম শামীম ও আলীম প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. সিদ্দুকুজ্জামান সিফাত অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের ভুল বুঝিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও আন্দোলন করানো হয়। কিন্তু পরবর্তীতে তারাই টাকার বিনিময়ে অধ্যক্ষকে স্ব-পদে বসালেন।’

তিন বছর ধরে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া উপজেলা যুবদলের আহবায়ক কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক তার একটি ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘দীর্ঘদিন আন্দোলন করার পরও অদৃশ্য শক্তির কাছে পরাজিত হলাম।’

আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘আমাকে বিভিন্ন সময় আন্দোলন থেকে সরে আসতে মোটা অঙ্কের টাকা অফার করতেন। মাওলানা সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারিসহ নানাবিধ অভিযোগ ছিল। সেই অভিযোগের পরিপেক্ষিতে আমরা আন্দোলন করি। কিন্তু সবশেষে অদৃশ্য চাপে আন্দোলন থেকে সরে এসেছি।’

এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোখলেছুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে ওই সাংবাদিক কে বলেন, তুমি সব বিষয়ে এতো ইন্টারেস্ট বোধ কর কেন? এটা বলো তো আগে আমাকে। সব ব্যাপারেই ইন্টারেস্ট বোধ কর কেন? ছোট মানুষ বুঝে বুঝে চলো। সব নিউজ করতে যাও! তোমরা এখনও কনিষ্ঠ। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সব সময় হাত দিবা না। হাত দেওয়ার বিষয় যেগুলা সেগুলা হাত দাও। সব বিষয়ে তো কথা বলা যায় না।

অন্য একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, যে টিচার বিএনপি নেতার নামে অভিযোগ করে ওই টিচারকে আমার সামনে নিয়ে এসে ইন্টারভিউ কর। যে শিক্ষক আর টিচার তাকে সামনে নিয়ে আসো। তাকে বলো যে চলেন একটু ওনার (বিএনপি সভাপতি) সাথে বসি।

আন্দোলন বন্ধ ও কিভাবে মাদ্রাসায় স্ব-পদে বসলেন এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে চর রাজীবপুর আলীম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে তার দাবি তাকে স্ব-পদে বসাতে পাঁচ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটি তিনি দেননি।

অধ্যক্ষ নিয়োগ ও পুনর্বহাল ঘিরে টাকার লেনদেন এবং আন্দোলনের এই প্রক্রিয়া স্থানীয়দের মাঝে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকেই বলছেন, বিএনপির এ ধরনের কার্যক্রম দলীয় ভাবমূর্তিতে আঘাত হেনেছে

 

banner close
banner close