
২০১৩ সালের ৩১ জুলাই চুয়াডাঙ্গার জীবননগর দৌলতগঞ্জ শুল্ক স্টেশনটিকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছিল তৎকালীন সরকার। তবে গেজেট প্রকাশের ১১ বছর পার হয়ে গেলেও আলোর মুখ দেখেনি প্রস্তাবিত স্থলবন্দরটি।
এর আগে একই বছরের ২৪ আগস্ট তৎকালীন সরকারের নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান আনুষ্ঠানিকভাবে এই স্থলবন্দরের উদ্বোধন করেন।
এরপর ২০১৪ সালের ৪ জুন শাজাহান খানসহ তৎকালীন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পংকজ শরন আবারো বন্দরের জন্য প্রস্তাবিত জায়গা পরিদর্শন করেন। সে সময় বাংলাদেশ-ভারত সরকারের দুই ঊর্ধ্বতন কর্তা দ্রুত সময়ে বন্দরটি চালুর ঘোষণা করলেও পরে সে উদ্যোগ থমকে যায়।
জীবননগর স্থলবন্দর বাস্তবায়ন কমিটির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দৌলতগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দরটি শুল্ক স্টেশন হিসেবে চালু ছিল। কিন্তু ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের সময় শুল্ক স্টেশনটি বন্ধ হয়ে যায়।
পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ১৯৭২ সালে শুল্ক স্টেশনটি পূনরায় চালুর নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে অজানা কারণে আবারও বন্দরটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১৯৯৮ সালের ১৫ জুলাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আবার শুল্ক স্টেশনটি চালুর প্রজ্ঞাপন জারি করে বন্দরটিতে ১৯টি পণ্য আমদানির অনুমতি দেয়।
পরবর্তীতে ২০০৯ সালের ১১ জুন আরেকটি প্রজ্ঞাপনে শুল্ক স্টেশন কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট সব দফতরকে নির্দেশ দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। সেটাও আলোর মুখ দেখেনি। এখন চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের পর দেখার বিষয় কত দিনে তা বাস্তবায়ন হয়।
প্রস্তাবিত দৌলতগঞ্জ বন্দরে তিন একর জমিতে ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড রয়েছে। প্রথমদিকে ২০০ গাড়ির মালামাল লোড-আনলোড করা সম্ভব। তাছাড়া সীমান্তের জিরো পয়েন্টে ৫০ টন ধারণ ক্ষমতার ৩০ ফুট চওড়া রাস্তাসহ জীবননগর পর্যন্ত ২০ ফুট চওড়ার ৬ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে।
একইসাথে সড়ক যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত সকল ধরণের সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। বন্দরটি থেকে ভারতের জাতীয় সড়কের দূরত্ব মাত্র ৩৪ কিলোমিটার। আর ঢাকার সাথে দূরত্ব ২৪০ কিলোমিটার।
এছাড়া ভারতীয় অংশে জাতীয় মহাসড়ক থেকে সব স্থানে যাতায়াত করা সহজ। জাতীয় সড়ক থেকে দেশের অন্যান্য স্থলবন্দরের যে দূরত্ব, তার থেকে অনেক কম দূরত্ব অর্থাৎ ২৫ কিলোমিটার দৌলতগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দর। যার কারণে ভারতের সাথে দেশের অন্যান্য স্থলবন্দরের থেকে এই বন্দরে সময় ও খরচ দুটোই কম হবে। বিদ্যমান নানা সুযোগ সুবিধা থাকার পরেও চালু হয়নি বন্দরটি।
দৌলতগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফের সহ-সাধারণ সম্পাদক মাজেদুর রহমান লিটন জানান, বর্তমানে বেনাপোল বন্দর দিয়ে দৈনিক ৫০০-৬০০ ট্রাক আসা-যাওয়া করে। সেগুলো খালাস করতে তিন থেকে ১৮ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এতে দারুণভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। দৌলৎগঞ্জ পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হলে বেনাপোল স্থলবন্দরের ওপর থেকে যেমন চাপ কমবে ঠিক তেমনি আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্টদের আর্থিক ক্ষতি অনেকটাই কমে আসবে। এছাড়া এখানে স্থানীয় হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
এদিকে গতকাল রবিবার চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে প্রস্তাবিত দৌলতগঞ্জ স্থলবন্দল পরিদর্শন করেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মুন্সী মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে ৫ সদস্য একটি প্রতিনিধি দল।
পরিদর্শন শেষে প্রতিনিধি দল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। রুটিন কাজে এসেছেনে জানিয়ে বলেন, বন্দর বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে ঢাকায় যোগাযোগের পরামর্শ দেন তারা।
এর আগে, সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান কে এম তরিকুল ইসলাম বন্দর পরিদর্শন করেছিলেন।
দীর্ঘদিনেও দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দরের কার্যক্রম চালু না হওয়ায় আশায় বুক বাধা জীবননগর উপজেলাবাসীর মধ্যে বন্দরটি চালুর ব্যাপারে হতাশা কাজ করছে।
আরও পড়ুন: