
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলের মাঠে মাঠে দুলছে হলুদ বর্ণের সরিষা ফুল। একনজরেই যেনো গাঢ় হলুদ বর্ণ ফুলের সমারোহে চোখ জুড়িয়ে যায়। শীতের সূচনালগ্ন থেকেই দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠে সবেমাত্র উঁকি দিতে শুরু করেছে সদ্য ফোঁটা সরিষা গাছের হলুদ রঙের ফুলগুলো।
দূরদূরান্ত থেকে গ্রামের মেঠোপথ ধরে প্রকৃতিপ্রেমীরা মনোরম এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসছেন। অপরূপ এই প্রকৃতির সাথে নিজেকে মেলে ধরতে তুলছেন রঙবেরঙের ছবি। আর সেই প্রকৃতির সাথে হাসছে মন মাতানো নয়ন জুড়ানো হলুদ রঙের সরিষার ফুল। আর এই সরিষা ফুলের সাথেই যেনো মিশে আছে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর হাজারো কৃষকের রঙিন স্বপ্ন।
চলতি রবি মৌসুমে সরিষা চাষে লাভের স্বপ্নে বিভোর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষক। দিনে দিনে বাজারে ভোজ্যতেলের দাম মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধির ফলে সরিষার তেলের চাহিদাও যেনো অনেকাংশে বেড়ে গেছে। এতে করে নিজেদের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারজাতকরণের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে লাভের আশায় সরিষা চাষের মধ্য দিয়ে স্বপ্ন বুনছেন কৃষকেরা। সরিষা আবাদে খরচের পরিমাণ সীমিত হওয়ায় দিনে দিনে এ উপজেলায় সরিষার আবাদও বাড়ছে বহুগুণ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে এ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে বারি-১৪ ও বারি-১৫ সহ বিভিন্ন জাতের প্রায় ১০ হাজার ৬২৮ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই কম বেশি সরিষার চাষ করা হয়েছে। উন্নত জাত ও দেশীয় জাতের রাই, চৈতা ও মাঘি সরিষার চাষ করছেন কৃষকরা। তবে প্রচলিত দেশি সরিষার চেয়ে উন্নত জাতের বারি-১৪ ও বারি-১৫ ফলন বেশি হওয়ায় এ দুই জাতের সরিষা চাষ বেশি হয় বলে জানান কৃষকেরা।
উপজেলার লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, ‘আমি গত বছর ১০ বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষার আবাদ করেছিলাম। তাতে বেশ ভাল ফলন পেয়েছি। এ বছর ২০ বিঘার মতো আবাদ করেছি। বৈরি আবহাওয়ার কবলে না পড়লে প্রায় ৩০ মন সরিষা উৎপাদন হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের চরাঞ্চলে সরিষা আর ভূট্টার আবাদই বেশি হয়। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে, তাহলে ফলন ভাল হবে বলে আশা করছি। আর ফলন ভাল হলে তো অবশ্যই আমরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হব।’
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. তৌহিদুজ্জামান খান বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবছর সরিষার আবাদ একটু কম হয়েছে। কারণ গত বছরের চেয়ে এ বছর পিঁয়াজের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরেও সরিষার আবাদ আরও বৃদ্ধি করার জন্য কৃষকদের সব ধরণের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে ভুট্টার জমিতে, রাস্তার পাশে, পুকুরপাড়, ফল বাগানসহ যে কোনো পতিত জায়গায় অন্যান্য ফসলের সাথে যেনো সরিষার চাষ করা হয়, এ জন্যও কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে কৃষকদের উৎসাহিত করার জন্য কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির মাধ্যমে বীজ ও সার দেয়াসহ সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তৌহিদুজ্জামান খান।
আরও পড়ুন: