রবিবার

৪ মে, ২০২৫
২১ বৈশাখ, ১৪৩২
৬ জিলক্বদ, ১৪৪৬

ধ্বংস হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য, হুমকির মুখে জনজীবন

পটুয়াখালী প্রতিনিধ

প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর, ২০২৪ ১৫:৪৬

শেয়ার

ধ্বংস হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য, হুমকির মুখে জনজীবন
কুয়াকাটা বনটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ছবি: বাংলা এডিশন 

পটুয়াখালীর সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। প্রায় ২৫০ বছর আগে এই জনপদের সৃষ্টি, চারদিকে সবুজ শ্যামল বনায়ন আর বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি কি ছিলনা এই জনপদে সমুদ্র সৈকতের কোল ঘেঁষে বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ, শৈবাল, লাল কাঁকড়া এবং অতিথি পাখির বিচরণে মুখরিত হয়ে থাকতো পুরো সৈকত। 

কালের বিবর্তনে ১৯৯৮ সালে পর্যটন ইয়ুথ ইন উদ্বোধনের মাধ্যমে কুয়াকাটা পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটে,ধিরে ধিরে এই জনপদ সারা বিশ্বের ভ্রমন পিপাসুদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মানুষের সমাগম বাড়তে থাকলে এখানকার জীববৈচিত্র্যের উপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পরতে শুরু করে, ঘুরতে আসা পর্যটকরা প্রতিনিয়ত তাদের ব্যাবহৃত প্লাস্টিক, পলিথিন সমুদ্র সৈকতে ফেলতে থাকে এবং সৈকতে পর্যটকরা অবাধে ঘোরাঘুরির ফলে জলজ উদ্ভিদ, লাল কাঁকড়া,বিভিন্ন ধরনের শৈবাল ও অতিথি পাখি হুমকির মুখে পড়ে এবং সৈকত থেকে  ধিরে ধিরে তাদের বিচরণ কমতে থাকে।। 

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পূর্ব পাশে অনেক বনাঞ্চল ইতিমধ্যে সমুদ্রের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে এবং একটি বনের গাছ পুরোপুরি পুড়ে গেছে দেখে হয়তো মনে হবে এটিকে কেউ আগুন লাগিয়ে পুড়িয়েছে কিন্তু আসলে তেমনটা না এই গাছ গুলো প্রকৃতির বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় এবং বাতাসে অতিরিক্ত লবনের কারনে পুরো বনটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। 

খুলনা থেকে আসা মহিউদ্দিন বলেন, গত ১০/১১ বছর আগে একবার কুয়াকাটা এসেছিলাম তখন পূর্ব পাশে বড় একটা ঝাউবন ছিলো কিন্তু এবার এসে পেলাম না সমুদ্রে ভেঙ্গে গেছে,তিনি আরো বলেন কুয়াকাটার অন্যতম দর্শনীয় স্পট ছিলো লাল কাকড়ার চর আগের বার যত কাকড়া দেখেছি তাতে আমাদের মুগ্ধ করেছিলো।কিন্তু এ বছর এসে ওভাবে কাকড়া দেখতে পেলাম না।

টোয়াকের সভাপতি ও পরিবেশ কর্মী রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আমাদের সবারই দৃষ্টি দেওয়া দরকার। মানুষের পদচারণা যেখানে বেশি হয় সেখানটায় অতিথি পাখি,লাল কাকড়া থাকার কথা নয়। ওরা একটু নিরিবিলি নির্জনে থাকতে পছন্দ করে। আপনারা জানেন বর্তমান কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত প্রায় ২৮ কিলোমিটার। এই পুরো সমুদ্র সৈকত জুড়ে একটা সময় কিন্তু অতিথি পাখি, লাল কাকড়ার বিচরণ ছিল। এগুলো হারিয়ে যাওয়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে আমাদের কুয়াকাটা এখন অজস্র পর্যটক আসতেছে এবং অবাদে এই সমস্ত স্পটে টুরিস্ট ঘুরতেছে।
স্বাভাবিক পর্যায়ে কিন্তু জীববৈচিত্র্য রক্ষার যে বিষয়টা সেটা আমরা ভুলে যাই।আমাদের একটু খেয়াল রাখতে হবে,যে জায়গায় লাল কাকড়া এবং অতিথি পাখিরা আসে। সেখান থেকে একটু দূর থেকেই যেন আমরা উপভোগ করি।আপনার যদি খোঁজ নিয়ে দেখেন, কুয়াকাটা আশপাশের যে দ্বিপগুলো আছে এবং নির্জন জায়গা গুলো আছে সেখানে কিন্তু প্রচুর লাল কাকড়া এবং অতিথি পাখি দেখা যাচ্ছে।। 

ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিওনের পুলিশ সুপার মো. আনসার উদ্দিন বলেন,পরিবেশ দূষণের কারণেই কিন্তু এই লাল কাকড়া এবং অতিথি পাখি সহ জীববৈচিত্র হারিয়ে যাচ্ছে।বিশেষ করে কুয়াকাটা আগত যে সমস্ত পর্যটকরা প্লাস্টিক এবং পলিথিন সমুদ্র পার্শ্ববর্তী এলাকায় ফেলতেছে সেটা কিন্তু একটা পর্যায়ে আবার সমুদ্রেই ভেসে যাচ্ছে। 
পাশাপাশি প্রত্যেকটা প্রাণীর কিন্তু একটি নিজস্ব ভুবন থাকে। তাদের এই বিচরণের জায়গা গুলোতে প্রচুর ট্যুরিস্টদের আনাগোনা হচ্ছে এবং এই ট্যুরিস্টদের পদচারণার কারণেই কিন্তু এরা হারিয়ে যাচ্ছে।।

banner close
banner close