মঙ্গলবার

১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১ পৌষ, ১৪৩২

শ্রীলঙ্কায় ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়ার তাণ্ডবে মৃত্যু বেড়ে ১২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১৭:৪৮

শেয়ার

শ্রীলঙ্কায় ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়ার তাণ্ডবে মৃত্যু বেড়ে ১২৩
ছবি: সংগৃহীত

শ্রীলঙ্কায় ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়ারের তাণ্ডবে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের ফলে পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হয়ে উঠছে। ১২৩ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে এবং ১৩০ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছে। শ্রীলঙ্কার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র (ডিএমসি) জানায়, এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ১৫ হাজারেরও বেশি বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং প্রায় ৪৪ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়ারের কারণে শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি এবং বন্যা সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে ঘর-বাড়ি, ফসল, ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ১ হাজারের বেশি রাস্তা ডুবে গেছে এবং কয়েকটি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ভূমিধসের কারণে অনেক অঞ্চলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং উদ্ধারকার্য কঠিন হয়ে উঠেছে।

দেশটির সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনী উদ্ধার তৎপরতায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের সাধারণ পরিচালক সাম্পাথ কোতুভেগোডা জানিয়েছেন, উদ্ধারকারী দলকে মাঠে নামানো হয়েছে, কিন্তু পরিস্থিতি খুবই জটিল এবং বন্যার পানির স্তর আরও বাড়ছে, ফলে অনেক জায়গায় উদ্ধার কাজ চলতে আরও সময় লাগবে।

শ্রীলঙ্কার রেড ক্রস সোসাইটির সেক্রেটারি-জেনারেল মহেশ গুণসেকারা জানিয়েছেন, সঙ্কটময় অঞ্চলে শত শত মানুষ আটকে পড়ে আছেন এবং তাদের নিরাপদে বের করে আনতে কঠোর পরিশ্রম চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় চলে গেছে, কিন্তু বন্যার ক্ষয়ক্ষতি ও ভূমিধসের কারণে এই দুর্যোগ এখনও চলমান। পানির স্তর বাড়ছে এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

কলম্বো শহরের কেলানি নদীর পাড় ভেঙে স্থানীয়দের জন্য আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে এবং পানি উপচে পড়ায় প্রায় ১০০০ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। শ্রীলঙ্কার সরকার জানিয়েছে, যদি বৃষ্টি আরও বাড়ে, তবে নতুন নতুন এলাকা বন্যায় আক্রান্ত হতে পারে। এই কারণে আরও সহায়তা প্রয়োজন এবং উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে।

এদিকে শ্রীলঙ্কা আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য আবেদন করেছে। প্রধানমন্ত্রী হরিণী আমারাসুরিয়া বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের সহযোগিতা চেয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শোক জানিয়ে বলেছেন, আমরা শ্রীলঙ্কার পাশে আছি এবং পরিস্থিতি উন্নতির সঙ্গে আরও সাহায্য প্রদান করতে প্রস্তুত। ভারত ইতোমধ্যে দুটি ত্রাণবাহী বিমান শ্রীলঙ্কায় পাঠিয়েছে এবং একটি ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ কলম্বোতে পৌঁছে শ্রীলঙ্কার জনগণের জন্য রেশন সরবরাহ করছে।

বন্যা পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি এবং কিছু এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের পরবর্তী বৃষ্টি হচ্ছে, যার কারণে আরও ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২০১৬ সালের বন্যায় ৭১ জন মারা গিয়েছিল, কিন্তু এই বারের বন্যায় এ সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে।

তবে, শ্রীলঙ্কার জনগণ একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করছে। অনেক মানুষ তাদের ঘর-সংসার খুলে গৃহহীনদের আশ্রয় দিচ্ছে এবং উদ্ধারকর্মীরা জীবন বিপন্ন করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও দেশটি একটি বড় বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তবুও আন্তর্জাতিক সহায়তার মাধ্যমে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে এবং শ্রীলঙ্কা ধীরে ধীরে এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে এমন আশা রয়েছে।



banner close
banner close