মঙ্গলবার

১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১ পৌষ, ১৪৩২

হাসিনার রায় ঘিরে ভারতের মিডিয়ায় যতো মিথ্যাচার

তানজিম হাসান

প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:৩৯

আপডেট: ১৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:৪২

শেয়ার

হাসিনার রায় ঘিরে ভারতের মিডিয়ায় যতো মিথ্যাচার
ছবি: সংগৃহীত

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়েছে, হাসিনাকে নিয়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ঘোষিত রায়ের বিষয়ে ভারত অবগত রয়েছে।

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরো বলেছে, ‘একটি নিকট প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত বাংলাদেশে শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি, স্থিতিশীলতাসহ বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থের বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। এই লক্ষ্য অর্জনে তারা সব সময় সব অংশীজনের সাথে গঠনমূলকভাবে যুক্ত থাকবো।’

গত বছর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সোমবার হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-এক এ ছাড়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। আরেক আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক-আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দেয়া হয়েছে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড।

এই রায় ঘোষণার পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হাসিনা ও আসাদুজ্জামানকে হস্তান্তরের জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত এই ব্যক্তিদের দ্বিতীয় কোনো দেশ আশ্রয় দিলে তা হবে অত্যন্ত অবন্ধুসুলভ আচরণ এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অবজ্ঞার শামিল। তাই বাংলাদেশ ভারত সরকারের প্রতি অনতিবিলম্বে দণ্ডপ্রাপ্ত এই দুই ব্যক্তিকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে আহ্বান জানায়।’

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে থাকা প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে দুজনকে হস্তান্তর করাটা ভারতের জন্য অবশ্যপালনীয় দায়িত্ব বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ২০২৪ সালের পাঁচ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যায় হাসিনা। অন্তর্বর্তী সরকার এর আগেও হাসিনাকে হস্তান্তর করার জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি ভারত সরকার।

এসবের মাঝে, হাসিনার রায় ঘিরে বিতর্কিত এবং বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি প্রধান শুভেন্দু অধিকারী। সোমবার টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

শুভেন্দু বলেন, বাংলাদেশে এখন জঙ্গীবাদের উত্থান হয়েছে। তারা চায় সেখানে পাকিস্তানী ভাবধারা প্রতিষ্ঠিত করতে।

এদিকে হাসিনার ফাঁসির রায়ের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো। জি-২৪ ঘন্টা প্রতিবেদনে এই রায়কে প্রহসনের রায় বলে মন্তব্য করা হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে ক্যাঙ্গারু কোর্ট বলেও উল্লেখ করেছে জি-২৪ ঘন্টা এবং রিপাবিলিক বাংলা।

এই রায়কে অবৈধ উল্লেখ করে বাংলাদেশের মানুষকে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে বলেছে হাসিনা। একই সাথে দেশে ফিরে সব কিছুর জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।

হাসিনার সাথে সুরি মিলিয়ে, একই কাথা বলেছেন নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। ভারতে পালিয়ে থাকা এই দুই নেতা, জি-২৪ ঘন্টাকে বলেছেন, হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় পূর্বপরিকল্পিত। এমনকি এই ট্রাইব্যুনালেই ডক্টর ইউনূসের বিচার হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশে গৃহযুদ্ধ বাঁধাতে চাচ্ছানে এমন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেছে ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম এনডিটিভি। এমনকি অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে পাকিস্তান ভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লস্কর-ই-তাইবা এবং জাইশ-ই-মোহাম্মদ এর যোগাযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

ফ্যাসিস্ট হাসিনার সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ব্যরিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল মন্তব্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এনডিটিভি। এই রায়কে অবৈধ উল্লেখ করে মহিবুল বলেছেন, হাসিনার বিচারের নামে নাটক মঞ্চায়ন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান গত এক মাস ধরে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন না। অথচ তার এই অভিযডোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন, মিথ্যা এবং বানোয়াট। হিসানার বিচার চলাকালে চেয়ারম্যান ট্রাইব্যুনাল উপস্থিত ছিলেন এবং খাস কামরায় বসেই রায় লিখছিলেন।

এইভাবেই পতিত সরকারের দোসররা ভারতে বসে বিভিন্ন গণমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন। সেদেশের গণমাধ্যম এসব ভিত্তিহীন খবর মুখোরুচকভাবে প্রচার করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্ট করছে এমনটাই মনে করছে সাধারণ মানুষ।



banner close
banner close