মঙ্গলবার

১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ০ পৌষ, ১৪৩২

ভারতে ‘মগজ-খেকো অ্যামিবা’র সংক্রমণ, মৃত্যু ১৯

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২০:৩৮

শেয়ার

ভারতে ‘মগজ-খেকো অ্যামিবা’র সংক্রমণ, মৃত্যু ১৯
প্রতিকি ছবি

ভারতের কেরালায় ‘মগজ-খেকো অ্যামিবার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে/ ছবি: ক্যাটেরিনা কন, সায়েন্স ফটো লাইব্রেরি

ভারতের দক্ষিণী রাজ্য কেরালায় আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে ‘মগজ-খেকো অ্যামিবার সংক্রমণ। এ বছর কেরালায় এখন পর্যন্ত ৬১টি নিশ্চিত আক্রান্তের মধ্যে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের বেশিরভাগ মৃত্যুই ঘটেছে গত কয়েক সপ্তাহে। প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিংগোএনসেফালাইটিস (পিএএম) নামক এই মারণ রোগ নিয়ে এরই মধ্যে সতর্কতা জারি করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ।

নিগ্লেরিয়া ফাউলেরি নামের এই অণুজীবকে সাধারণভাবে ‘মগজ-খেকো অ্যামিবা বলা হয়, যা মানুষের মস্তিষ্কে ভয়াবহ সংক্রমণ ঘটায়।

রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জ জানিয়েছেন, কেরালা বর্তমানে এক গুরুতর জনস্বাস্থ্য সংকটের শিকার। আগে কোঝিকোড ও মালাপ্পুরম জেলার কিছু ক্লাস্টারে সংক্রমণ শনাক্ত হলেও এবার রাজ্যের নানা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে বিচ্ছিন্ন সংক্রমণ।

আক্রান্তদের মধ্যে তিন মাস বয়সী শিশু থেকে শুরু করে ৯১ বছরের প্রবীণ পর্যন্ত রয়েছেন। তিনি বলেন, গতবার যেখানে একক পানির উৎস থেকে সংক্রমণের ঘটনা মিলেছিল, এবার আমরা শুধু বিচ্ছিন্ন কেস পাচ্ছি। এতে আমাদের রোগতত্ত্ব অনুসন্ধান জটিল হয়ে পড়েছে।

২০১৬ সালে প্রথমবার কেরালায় পিএএম শনাক্ত হয়। ২০২৩ সাল পর্যন্ত মাত্র আটটি নিশ্চিত কেস ছিল। কিন্তু গত বছর এই সংখ্যা হঠাৎ বেড় ৩৬ জনে পৌঁছায় ও ৯ জন মারা যান। এ বছর এখন পর্যন্ত ৬৯ জন আক্রান্ত ও ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

কেরালা সরকারের এক নথি অনুযায়ী, পিএএম কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে। এর আক্রমণে মস্তিষ্কের টিস্যু ধ্বংস হওয়ার ফলে মারাত্মক ফোলা ও মৃত্যুর কারণ হয়। সাধারণত একেবারে সুস্থ শিশু, কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের মধ্যেই এটি বেশি দেখা যায়।

নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গরম, বিশেষ করে ‘স্থির পানিই মগজ-খেকো অ্যামিবার প্রধান বাহক। সংক্রমণ ঘটে মূলত নাকের মাধ্যমে, অলফ্যাক্টরি মিউকোসা ও ক্রিব্রিফর্ম প্লেট হয়ে। তবে দূষিত পানি পান করলে এই রোগ হয় না। অর্থাৎ, যারা ওই পানিতে সাঁতার কাটে, ডুব দেয় বা গোসল করে, তারাই ঝুঁকিতে থাকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনও এই রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে পানির তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া ও অতিরিক্ত গরমে মানুষ বেশি সময় পানিতে কাটাচ্ছে। ফলে এ অণুজীবের সঙ্গে সংস্পর্শ বাড়ছে। তবে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে সংক্রমণ ছড়ায় না।

এই রোগের মৃত্যুহার অত্যন্ত বেশি, কারণ সময়মতো শনাক্ত করা কঠিন। প্রাথমিক লক্ষণগুলো ব্যাকটেরিয়াজনিত মেনিনজাইটিসের মতো, যেমন- তীব্র মাথাব্যথা, জ্বর, বমি বমি ভাব ও বমি। সাধারণত ১ থেকে ৯ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয় ও কয়েক ঘণ্টা থেকে এক-দুই দিনের মধ্যে মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মস্তিষ্কে প্রবেশের পর নিগ্লেরিয়া ফাউলেরি খুব দ্রুত প্রতিরোধব্যবস্থা অকার্যকর করে ফেলে। এতে কয়েক দিনের মধ্যেই রোগীর মৃত্যু ঘটে।



banner close
banner close