সোমবার

১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

নেপালে মৃত্যু বেড়ে ১৯, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিবেচনায় সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২২:০৭

শেয়ার

নেপালে মৃত্যু বেড়ে ১৯, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিবেচনায় সরকার
ছবি: সংগৃহীত

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে তরুণদের বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে এখন পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট মৃত্যুর এই নতুন সংখ্যা জানায়।

এদিকে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি এই ঘটনায় জরুরি মন্ত্রিসভা বৈঠক ডেকেছেন। এক সূত্রের বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানিয়েছে, চাপের মুখে সরকার সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা করছে।

এর আগে গত চার সেপ্টেম্বর দেশটির সরকার ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, লিঙ্কডইন, ইউটিউবসহ ২৬টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করে। এই প্ল্যাটফর্মগুলোকে তিন সেপ্টেম্বরের মধ্যে যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধন করতে বলা হয়েছিল। নিবন্ধনের জন্য স্থানীয় যোগাযোগকারী, অভিযোগ পরিচালনাকারী এবং স্ব-নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়িত্বশীল ব্যক্তি নিয়োগের শর্ত দেওয়া হয়। টিকটক, ভাইবার এবং উইটক নিবন্ধন করলেও অন্য প্ল্যাটফর্ম তা না করায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। সরকারের দাবি, নকল আইডি ব্যবহার করে সাইবার অপরাধ এবং সামাজিক সম্প্রীতি বিঘ্নিত হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী ওলি নিষেধাজ্ঞাকে জাতীয় মর্যাদার বিষয় বলে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, আমরা প্ল্যাটফর্ম বা সোশ্যাল নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে নই, আমরা আইনহীনতা এবং জাতিকে হেয় করার বিরুদ্ধে। তিনি দাবি করেন, সরকার এক বছরেরও বেশি সময় ধরে প্ল্যাটফর্মগুলোকে নিবন্ধন, কর এবং জবাবদিহিতার আওতায় আসতে বলেছে, কিন্তু তারা তা অগ্রাহ্য করেছে।

এদিকে বিক্ষোভের মূলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তরুণদের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ রয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। ২০১৭ সালের নেপাল এয়ারলাইন্সের এয়ারবাস চুক্তিতে ১০ দশমিক চার মিলিয়ন ডলার ক্ষতির ঘটনা এবং রাজনীতিবিদদের সন্তানদের বিলাসবহুল জীবনযাত্রার ভিডিও টিকটকে ভাইরাল হওয়া বিক্ষোভকে উসকে দেয়। যেখানে নেপালের মাথাপিছু আয় মাত্র ১৩০০ ডলার।

সোমবার সকাল ৯টায় কাঠমান্ডুর মাইতিঘর এলাকায় হাজার হাজার তরুণ বিক্ষোভকারী জড়ো হয়ে সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞা এবং দেশে ব্যাপক দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। বিক্ষোভকারীরা জাতীয় পতাকা হাতে ‘দুর্নীতি বন্ধ কর, সোশ্যাল মিডিয়া নয়’স্লোগান দিয়ে পার্লামেন্ট ভবনের দিকে অগ্রসর হয়। এসময় পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে কিছু বিক্ষোভকারী ভেতরে প্রবেশ করে, যা সংঘর্ষের সূত্রপাত করে।

বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন নিউ বানেশ্বর এলাকায় দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করে। এই কারফিউ রাষ্ট্রপতি ভবন, উপরাষ্ট্রপতির বাসভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশপাশের এলাকায়ও প্রসারিত করা হয়। কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসনের প্রধান চাবিলাল রিজালের সই করা নোটিশে এলাকায় সমাবেশ, মিছিল বা বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করা হয়।

পোখারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ইয়োগ রাজ লামিচানে বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞা অসন্তোষের জ্বালানি হিসেবে কাজ করেছে, তবে মূল কারণ তরুণদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বাদ দেওয়া এবং দীর্ঘদিনের অবহেলা।

বিক্ষোভটি আয়োজন করে হামি নেপাল নামে একটি এনজিও, যা ২০১৫ সালে একটি তরুণ আন্দোলন হিসেবে শুরু হয়েছিলো। সংস্থাটি কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে বিক্ষোভের অনুমতি পেয়েছিল। লামিচানে বলেন, তাদের দাবির মূলে রয়েছে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জবাবদিহিতা।



banner close
banner close