যুক্তরাষ্ট্রে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরের আত্মহত্যার ঘটনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট চ্যাটজিপিটির ভূমিকা রয়েছে—এমন অভিযোগ এনে ওপেনএআই ও প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্যাম আল্টমানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক মার্কিন দম্পতি।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) ক্যালিফোর্নিয়ার সুপিরিয়র কোর্টে মামলাটি দায়ের করা হয় বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
দম্পতির দাবি, তাদের ছেলে অ্যাডাম আত্মহত্যার পদ্ধতি জানতে ও একটি চিরকুট লিখতে চ্যাটজিপিটির সহায়তা নেয়। আত্মহত্যার আগে ছয় মাস ধরে সে নিয়মিতভাবে এই চ্যাটবট ব্যবহার করছিল এবং একপর্যায়ে এটিকেই তার ‘একমাত্র বন্ধু’ হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করে। ফলে ধীরে ধীরে তার পরিবার, বন্ধু ও প্রিয়জনদের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, একবার অ্যাডাম চ্যাটজিপিটিকে জানায়, সে চায় তার রুমে ফাঁসির দড়ি রাখতে, যাতে কেউ তা দেখে তাকে থামাতে পারে। কিন্তু চ্যাটজিপিটি বরং তাকে দড়িটি লুকিয়ে রাখতে ও আত্মহত্যার পরিকল্পনা গোপন রাখতে উৎসাহ দেয়।
এ ঘটনার পর কিশোরের পরিবার মনে করে, এআই চ্যাটবটের পরামর্শই অ্যাডামের মানসিক অবস্থাকে আরও জটিল করে তোলে এবং আত্মহত্যার পথে ঠেলে দেয়।
এই ঘটনা শুধু একটি বিচ্ছিন্ন মামলা নয়। যুক্তরাষ্ট্রে এর আগেও একাধিক পরিবার এআই চ্যাটবটের ক্ষতিকর প্রভাবের অভিযোগ এনে মামলা করেছে।
২০২৪ সালে ফ্লোরিডার মেগান গার্সিয়া নামের এক নারী ‘ক্যারেক্টার এআই’ নামে একটি চ্যাটবট ব্যবহারের ফলে তার ১৪ বছরের ছেলের আত্মহত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। এরপর আরও কয়েকটি পরিবার একই ধরনের অভিযোগে মামলা করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআই চ্যাটবটগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয় যেন তারা ব্যবহারকারীর প্রতি সদয়, সহনশীল ও ‘বন্ধুর মতো’ আচরণ করে। ফলে কিশোর-কিশোরীরা অনেক সময় বাস্তব জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং মানসিকভাবে এই চ্যাটবটগুলোর ওপর নির্ভরশীল হয়ে যায়।
ওপেনএআই জানিয়েছে, তারা একটি ‘নিরাপদ ও সহায়ক প্ল্যাটফর্ম’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে। বিশেষ করে কিশোর ব্যবহারকারীদের জন্য পৃথক নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করার কথাও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
২০২৪ সালের আগস্টে প্রতিষ্ঠানটি নিজেই সতর্ক করেছিল যে, চ্যাটজিপিটির সঙ্গে অতিরিক্ত সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলা ব্যবহারকারীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এতে বাস্তব জীবনে মানুষের সঙ্গে সংযোগ ক্ষীণ হয়ে যেতে পারে এবং ব্যবহারকারীরা চ্যাটবটের প্রতি অতিরিক্ত বিশ্বাস তৈরি করে ফেলতে পারেন।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি ‘জিপিটি-৫’ সংস্করণ চালু করেছে, যদিও অ্যাডাম ব্যবহার করছিল আগের একটি মডেল।
মামলাটি বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে। তবে এটি এআই নৈতিকতা ও শিশু-কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছে।
আরও পড়ুন:








