ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আদৌ বিএ পাশ কিনা গত ১১ বছর ধরে চলা এই সন্দেহ শেষ পর্যন্ত রহস্যই থেকে গেল। বিরোধীদের অতি-উৎসাহে কোট-কাছারি পর্যন্ত গড়িয়েছিল সে জিজ্ঞাসা। অবশেষে দিল্লি হাইকোর্ট সোমবার তাদের রায়ে জানাল, প্রধানমন্ত্রীর স্নাতকের ডিগ্রি প্রকাশে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় বাধ্য নয়।
একইভাবে সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপি নেত্রী স্মৃতি ইরানির শিক্ষাগত যোগ্যতা ঘিরে ওঠা প্রশ্নটিও থেকে গেল রহস্যের আঁধারে। দিল্লি হাইকোর্টে মোদী মামলার রায় শোনান বিচারপতি শচীন দত্ত। একই সঙ্গে তিনি জানান, ইরানির দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফল প্রকাশ করাও বাধ্যতামূলক নয়।
বিচারপতি শচীন দত্তের একক বেঞ্চ জানায়, মোদির একাডেমিক রেকর্ড ‘ব্যক্তিগত তথ্য’ হিসাবে গণ্য হবে এবং তা তথ্য অধিকার আইনে অধীনে পড়ে। সে সঙ্গে আদালত কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনের পুরোনো আদেশ বাতিল করে দেয়। রায়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, জনস্বার্থ এবং জনকৌতুহল এক নয়। শুধু কৌতুহল মেটানোর জন্য কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করা যায় না।
আদালত আরও বলেন, তথ্য অধিকার আইন সরকারের কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা আনতে তৈরি হলেও এটি সংবাদমাধ্যমের সংবেদনশীল কাহিনী তৈরির জন্য নয়। আদালতের মতে, শিক্ষাগত যোগ্যতা কোনো সরকারি পদে নির্বাচিত হওয়ার মৌলিক শর্ত নয়, তাই এটি জনস্বার্থের অন্তর্ভুক্ত বলা যাবে না।
মোদীকে ঘিরে এই সংশয় ও সন্দেহের কারণও মোদী নিজেই। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর বিভিন্ন টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, কৈশোরে গৃহত্যাগী হওয়ায় স্কুলের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর হঠাৎই জানাজানি হয়, তিনি গুজরাট ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যথাক্রমে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে সেই দুই ডিগ্রির প্রশংসাপত্রের অনুলিপিও প্রকাশ করা হয়। কিন্তু সেই প্রশংসাপত্র ঘিরে জন্ম নেয় একাধিক প্রশ্ন, যার গ্রহণযোগ্য জবাব আজও কেউ দিতে পারেনি।
নির্বাচনি হলফে মোদী বলেছিলেন, ১৯৭৮ সালে বহিরাগত ছাত্র হিসাবে তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘এন্টায়ার পলিটিক্যাল সায়েন্সে’ তৃতীয় ডিভিশনে বিএ পাশ করেন। অথচ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘এন্টায়ার পলিটিক্যাল সায়েন্স’ নামে কোনো বিষয়ই কোনো কালে ছিল না। সে সময় ডিগ্রিধারীদের হাতে লেখা প্রশংসাপত্র দেওয়া হতো।
অথচ মোদির যে প্রশংসাপত্র সরকারের পক্ষে প্রচার করা হয়, তা ছিল ছাপানো। প্রশংসাপত্র ছাপার ক্ষেত্রে যে হরফ ব্যবহার করা হয়েছে, দেখা যায় তা ১৯৯২ সালে তৈরি। একইভাবে হলফনামায় তার দাবি ছিল, ১৯৮৩ সালে গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি প্রথম শ্রেণিতে এমএ পাশ করেছিলেন।
সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির স্কুলের দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফল ঘিরেও এমনই বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল।
ভিডিও লিংক: https://www.youtube.com/watch?v=eOJL5mgCDGA
আরও পড়ুন:








