রবিবার

১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে চার শর্ত দিলেন পুতিন

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২ আগস্ট, ২০২৫ ১১:৪৭

শেয়ার

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে চার শর্ত দিলেন পুতিন
ফাইল ছবি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে চারটি শর্ত দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেইউক্রেনকে পুরো পূর্বাঞ্চলীয় দনবাস অঞ্চল ছাড়তে হবে, ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ করতে হবে, নিরপেক্ষ থাকতে হবে এবং পশ্চিমা সেনাদের দূরে রাখতে হবে।

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) বার্তা সংস্থা রয়টার্স ক্রেমলিনের শীর্ষ পর্যায়ের তিনটি সূত্রের বরাত দিয়ে তথ্য প্রকাশ করেছে।

রয়টার্স জানায়, শুক্রবার আলাস্কায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন পুতিন। চার বছরেরও বেশি সময় পর এটি ছিল প্রথম রাশিয়া-মার্কিন শীর্ষ সম্মেলন। প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠকজুড়ে মূলত ইউক্রেন সংকট ঘিরে সম্ভাব্য সমঝোতা নিয়েই আলোচনা হয়।

বৈঠক শেষে ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়ে পুতিন বলেন, এই বৈঠক ইউক্রেনে শান্তির পথে অগ্রসর হওয়ার দরজা খুলে দিতে পারে। তবে উভয় পক্ষই বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করেনি। পরে রয়টার্সের প্রতিবেদনে উঠে আসে, বৈঠকের পর পুতিনের প্রস্তাবের কিছু ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সেখান থেকে বোঝা যায়, যুদ্ধ সমাপ্তির জন্য ক্রেমলিন কী ধরনের শর্ত সামনে আনতে চাইছে।

সূত্রগুলোর তথ্যে জানা গেছে, পুতিন এবার তার আগের শর্ত থেকে কিছুটা সরে এসেছেন। গত বছর জুনে দেওয়া শর্তে তিনি ইউক্রেনকে চারটি প্রদেশদোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন জাপোরিঝঝিয়া ছেড়ে দেওয়ার দাবি করেছিলেন। রাশিয়া এগুলোকে নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে দাবি করে আসছে। কিন্তু নতুন প্রস্তাবে তিনি শুধু দনবাস অঞ্চল পুরোপুরি ছাড়ার দাবি তুলেছেন। এর বিনিময়ে খেরসন জাপোরিঝঝিয়ায় যুদ্ধ বন্ধের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

মার্কিন তথ্য অনুসারে, বর্তমানে রাশিয়া দনবাসের প্রায় ৮৮ শতাংশ এবং খেরসন জাপোরিঝঝিয়ার প্রায় ৭৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, রাশিয়া ইউক্রেনের খারকিভ, সুমি দিনিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলের ছোট ছোট দখলকৃত অংশ ছেড়ে দিতেও রাজি আছে।

তবে ন্যাটো ইস্যুতে পুতিনের অবস্থান অপরিবর্তিত। তিনি চান, ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগদানের পরিকল্পনা বাতিল করুক এবং জোটের পক্ষ থেকে আইনগত নিশ্চয়তা দেওয়া হোক যে, ন্যাটো আর পূর্বদিকে সম্প্রসারিত হবে না। একইসঙ্গে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করতে হবে এবং কোনো পশ্চিমা সেনা যেন শান্তিরক্ষী বাহিনী হিসেবেও ইউক্রেনের মাটিতে মোতায়েন না হয়।

যদিও দুই পক্ষের অবস্থান এখনও বিস্তর দূরত্বে রয়েছে। ২০২২ সালে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে তিন বছরের বেশি সময় কেটে গেছে। তারও আগে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পর থেকেই পূর্ব ইউক্রেনে রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে আসছে ইউক্রেনীয় বাহিনী।

বিষয়ে ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করেনি। তবে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বারবার বলেছেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ভূখণ্ড থেকে সেনা প্রত্যাহার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। দনবাস অঞ্চলকে তিনি রাশিয়ার অগ্রযাত্রা ঠেকানোরদুর্গহিসেবে উল্লেখ করেছেন।

জেলেনস্কির ভাষ্য, 'যদি শুধু পূর্বাঞ্চল থেকে সরে যাওয়ার শর্ত থাকে, সেটি আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এটি আমাদের দেশের অস্তিত্বের প্রশ্ন। সেখানে আমাদের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে।'

ইউক্রেনের সংবিধানে ন্যাটোতে যোগদানকে কৌশলগত লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করা আছে। কিয়েভ মনে করে, এটিই তাদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা। জেলেনস্কির মতে, ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দেবে কি দেবে নাতা নির্ধারণের ক্ষমতা রাশিয়ার নেই।

রাশিয়ার প্রস্তাব নিয়ে হোয়াইট হাউস ন্যাটো এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।



banner close
banner close