মঙ্গলবার

১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ০ পৌষ, ১৪৩২

বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধে কলকাতার ব্যবসায়ীদের হাহাকার, ক্ষতি ৫০০০ কোটি রুপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৪ আগস্ট, ২০২৫ ১৩:২২

আপডেট: ৪ আগস্ট, ২০২৫ ১৩:২৩

শেয়ার

বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধে কলকাতার ব্যবসায়ীদের হাহাকার, ক্ষতি ৫০০০ কোটি রুপি
ছবি: কলকাতার মারকুইস স্ট্রিট।

বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কলকাতার পর্যটননির্ভর অর্থনীতিতে ধস নেমেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ভিসা জটিলতার প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেমিনি বাংলাদেশনামে পরিচিত নিউ মার্কেট, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট এবং মারকুইস স্ট্রিট সংলগ্ন অঞ্চলটি। শুধু এই এলাকাতেই আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছাড়িয়েছে হাজার কোটি রুপি। আর সামগ্রিকভাবে কলকাতার ব্যবসায়ীদের ক্ষতি ছুঁয়েছে প্রায় হাজার কোটি রুপি।

ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের জুলাইয়ে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারত বাংলাদেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় নয়াদিল্লি বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। যদিও খুব সীমিত পরিসরে এখনো কিছু জরুরি ভিত্তির ভিসা দেওয়া হচ্ছে, তবে সেটির সংখ্যা নগণ্য।

এমন এক সময়ে, যখন করোনাকাল কাটিয়ে পর্যটন খাত কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল, তখন এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা নতুন করে বড় আঘাত হানে। এক বছর আগেও যেসব রাস্তাঘাট ছিল বাংলাদেশি পর্যটকে মুখর, আজ তা জনশূন্য। কম খরচে থাকা, ওপার বাংলার স্বাদবহুল খাবার এবং নিকটস্থ হাসপাতালের জন্য বিখ্যাত এই এলাকাগুলো পর্যটকদের অভাবে এখন নিস্তব্ধ।

কলকাতার ব্যবসায়ীদের সংগঠন ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন জানায়, পর্যটন, হোটেল, রেস্তোরাঁ, ট্র্যাভেল এজেন্সি, মানি এক্সচেঞ্জ, চিকিৎসা সেবা এবং পরিবহনসব মিলিয়ে এই অঞ্চলে প্রতিদিন প্রায় কোটি রুপির লেনদেন হতো। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী খান বলেন, 'শুধু নিউ মার্কেট বড়বাজার অঞ্চল যুক্ত করলে এই ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি রুপি ছাড়িয়ে যাবে।'

বর্তমানে অনেক ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে, আর যারা টিকে আছে, তারাও বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে। স্থানীয় এক ট্র্যাভেল কোম্পানির ব্যবস্থাপক প্রবীর বিশ্বাস বলেন, 'আগে দিনে একাধিক বাসভর্তি পর্যটক আসত, এখন অনেক দিন একটিও দেখা যায় না।' মুদ্রা বিনিময়ের ব্যবসাও মুখ থুবড়ে পড়েছে। মারকুইস স্ট্রিটের কারেন্সি এক্সচেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশনএর সম্পাদক মোহাম্মদ ইন্তেজার বলেন, 'আমরা সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। এখন টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে।'

বেশ কিছু ছোট মাঝারি রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে। বড় রেস্তোরাঁগুলোর ব্যবসাও অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। রাঁধুনি রেস্তোরাঁর মালিক এন সি ভৌমিক বলেন, 'আমাদের আয় মাত্র ২০ শতাংশে এসে ঠেকেছে। এই অবস্থা বেশিদিন চললে আমাদের টিকে থাকাও অসম্ভব হয়ে পড়বে।'

শুধু ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানই নয়, পর্যটননির্ভর অনেক অনানুষ্ঠানিক খাতের মানুষের জীবনেও আঘাত হেনেছে এই সংকট। হোটেল কর্মী, গাইড, রাঁধুনি, গাড়িচালক থেকে শুরু করে হোম-স্টে অপারেটররাও উপার্জন হারিয়ে দিশেহারা। এলিয়ট রোডের বাসিন্দা ফারহান রসুল বলেন, 'কোভিড পরবর্তী চাহিদা দেখে আমি দুটি গাড়িতে বিনিয়োগ করেছিলাম। মাসে এখন পাঁচ-ছয়ের বেশি বুকিং হয় না। অথচ প্রতি মাসে আমাকে দেড় লাখ রুপি কিস্তি পরিশোধ করতে হয়।'

বণিকেরা বলছেন, মহামারি-পরবর্তী ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই আবারও এমন সংকট তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাকেই কঠিন করে তুলেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা দ্রুত পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের আশায় প্রহর গুনছেন।



banner close
banner close