ভারতের বিহার রাজ্যের পূর্ণিয়ার টেটগামা গ্রামে ‘ডাইনি’ সন্দেহে একই পরিবারের পাঁচজনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে এবং জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই মর্মান্তিক ঘটনার তিন সপ্তাহ পার হলেও গ্রামে এখনও আতঙ্ক ও শোকের ছায়া বিরাজ করছে। খবর বিবিসির।
ঘটনাটি ঘটে গত ৬ জুলাই রাতে। স্থানীয় সময় রাত ১০টার দিকে উত্তেজিত জনতা ৭১ বছর বয়সী বিধবা কাতো ওরাওঁয়ের বাড়ির সামনে জড়ো হয়। রাতভর চলে বর্বরতা। নিহতদের মধ্যে ছিলেন কাতো ওরাওঁ, তার ছেলে বাবুলাল ওরাওঁ, পুত্রবধূ সীতা দেবী, নাতি মনজিত ও নাতবধূ রানী দেবী। কোনোভাবে প্রাণে বেঁচে যায় বাবুলালের কিশোর পুত্র।
পুলিশ জানায়, গ্রামবাসী রামদেব ওরাওঁর ছেলে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করলে তিনি কাতো ওরাওঁ ও তার পরিবারকে দায়ী করে ‘ডাইনি’ আখ্যা দেন। এরপর স্থানীয় কয়েকজন ওঝার সহায়তায় জনতার মধ্যে উস্কানি ছড়িয়ে পড়ে। উত্তেজিত জনতা ধারালো অস্ত্র, লাঠি ও রড নিয়ে হামলা চালায়। ভিকটিমদের দড়ি দিয়ে বেঁধে মারধরের পর তাদের ওপর পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
নিহতদের পোড়া দেহ পরে কাছাকাছি একটি পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়। জেলা প্রশাসনের ভাষ্যমতে, ঘটনাটি মুফাসিল থানা থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে ঘটলেও পুলিশ জানতে পারে প্রায় ১১ ঘণ্টা পর। এই বিলম্বের দায় স্বীকার করে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
পুলিশের মামলায় ২৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং আরও ১৫০-২০০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। মূল অভিযুক্ত রামদেব পলাতক।
জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ভারতে ডাইনি সন্দেহে অন্তত ২,৫০০ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী।
স্থানীয় সমাজকর্মী মীরা দেবী বলেন, "উপজাতি এলাকাগুলোতে শিক্ষার অভাব এবং চিকিৎসাসেবার সংকটে মানুষ এখনও ভূতপ্রেত ও তন্ত্রমন্ত্রের ওপর বিশ্বাস করে।"
গ্রাম পরিষদের সভাপতি সন্তোষ সিং জানান, "বেশিরভাগ শিশুই স্কুল ছেড়ে পরিবারসহ ইটভাটায় কাজ করে। শিক্ষার অভাবে কুসংস্কার বেঁচে আছে।"
টেটগামা গ্রামের প্রায় সব বাসিন্দা এখন গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। বন্ধ বাড়ির দরজায় তালা, পরিত্যক্ত বাড়ির অন্ধকার—সব মিলিয়ে গ্রামজুড়ে শোক ও আতঙ্কের ছায়া।
প্রত্যক্ষদর্শী মনীষা দেবী বলেন, “রাতে হঠাৎ গোলমালের শব্দে ঘুম ভেঙে দেখি, বাবুলালের বাড়ির সামনে বিশাল ভিড়। কিছুই করার ছিল না, শুধু অসহায়ের মতো সব কিছু দেখতে হয়েছে। সেই ভয়াবহ দৃশ্য এখনও চোখের সামনে ভাসে।”
আরও পড়ুন:








