মঙ্গলবার

১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ০ পৌষ, ১৪৩২

ভারতের ওপর কেন খেপলেন ট্রাম্প

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২ আগস্ট, ২০২৫ ১৬:৫৫

আপডেট: ২ আগস্ট, ২০২৫ ১৬:৫৭

শেয়ার

ভারতের ওপর কেন খেপলেন ট্রাম্প
ছবি: কোলাজ

এক সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। অন্তত সংবাদ মাধ্যম গত কয়েক বছর ধরে তেমনটাই প্রচার করেছে। মোদী-ট্রাম্পের সম্পর্কের কারণে বাংলাদেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্টের পক্ষে দেশের রাস্তায় মিছিল বের করে। আশা ছিল, পতিত-পলাতক শেখ হাসিনাকে ট্রাম্পই আবার ক্ষমতার মসনদে বসাতে পারবেন।

আশা কতটা অসার তা প্রমাণ হয়ে গেছে গত দুদিনে। বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ পারস্পরিক শুল্ক ভারতের ওপরই বসিয়েছেন ট্রাম্প। এর থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার, বন্ধুত্বের বাগাড়ম্বড় মোদী- করতেন। ট্রাম্প জানিয়েছেন, তার প্রশাসন আজ শুক্রবার অর্থাৎ আগস্ট থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে। এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হবে।

হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্প তার নিজস্ব সামাজিক প্লাটফর্ম ট্রুথ সোস্যালে জানান, ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ।

জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্যলক্ষ্য করেছে এবং এরপ্রভাব মূল্যায়ন করবে।

হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম। শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, ৃযুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে। যেন উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি কৃষিপণ্য।

সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতেরঅতি উচ্চ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে। বুধবার ট্রুথ সোস্যালে ট্রাম্প লেখেন, বছরের পর বছর তারা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছেন। কারণ ভারতের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।

দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে। ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় দশমিক শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে ছিল।

ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে। ট্রাম্প বুধবার আরও লেখেন, মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।

ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যের তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, কয়েক মাস ধরে ভারত যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। ভারত সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।

আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।



banner close
banner close