ইউরোপের তিন শক্তিধর দেশ—যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে বহুল প্রতীক্ষিত পরমাণু আলোচনা শুক্রবার (২৫ জুলাই) তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আলোচনার ফল অনুকূলে না এলে ইরানের ওপর পুনরায় আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা জারির হুঁশিয়ারি দিয়েছে দেশগুলো। খবর আল জাজিরার।
এই আলোচনার সময়টি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সম্প্রতি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। এরপরই ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধানের সঙ্গে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির প্রথমবারের মতো টেলিফোনে কথা হয়।
২০১৫ সালে ইরান এবং যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তির আওতায় ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। তবে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘায়ি জানিয়েছেন, আলোচনাটি হবে উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে। এর আগে ওমানের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পাঁচ দফা আলোচনা হলেও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ইস্যুতে মতানৈক্যের কারণে তা অগ্রগতি পায়নি।
পশ্চিমা দেশগুলো চায়, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম বন্ধ করুক যাতে তা সামরিক কাজে ব্যবহৃত না হয়। কিন্তু তেহরান বরাবরই দাবি করে আসছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি শুধুই বেসামরিক উদ্দেশ্যে।
ইসরায়েলের আকস্মিক হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রও ইরানের তিনটি বড় পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালিয়ে সেগুলো “সম্পূর্ণ ধ্বংস” করার দাবি করেছে। এতে শীর্ষ ইরানি সামরিক কর্মকর্তা, পরমাণু বিজ্ঞানী এবং শতাধিক বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এ ঘটনার পর গত ২৪ জুন একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
ইরান এ হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে “সহযোগী হামলাকারী” আখ্যা দিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাগচি ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “যদি তারা আলোচনায় গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে চায়, তবে হুমকি ও চাপের পথ পরিহার করতে হবে। ‘স্ন্যাপ-ব্যাক’ নিষেধাজ্ঞা নৈতিক ও আইনগতভাবে অবৈধ।”
এদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হঠাৎ মস্কোয় ইরানের সর্বোচ্চ নেতার পরমাণু বিষয়ক উপদেষ্টা আলি লারিজানির সঙ্গে বৈঠক করেন।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, বৈঠকে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা এবং ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ঘিরে রাশিয়ার মূল্যায়ন তুলে ধরেন লারিজানি। পুতিন রাজনৈতিক সমাধানের ওপর জোর দেন এবং রাশিয়ার মধ্যস্থতামূলক অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন।
রাশিয়া ইরানের ধর্মীয় নেতৃত্বের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখলেও সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় প্রকাশ্য কড়া প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তবু কূটনৈতিক সমাধানের পক্ষে দেশটি দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে।
আরও পড়ুন:








