রবিবার

১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যা নিয়ে রসিকতা, গাজা তারই সিক্যুয়েল

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২ জুলাই, ২০২৫ ১৬:১৮

শেয়ার

স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যা নিয়ে রসিকতা, গাজা তারই সিক্যুয়েল
ছবি সংগৃহীত

বসনিয়ার গণহত্যা পশ্চিমাদের কাছে উপহাসে পরিণত হয়েছে। আর গাজা তাদের দৃষ্টিতে সেই গণহত্যারই ধারাবাহিকতা। বরং নতুন এই নৃশংসতাকে তারা উৎসাহিত করছে। একসময় এই পশ্চিমারাই আন্তরিকতার সঙ্গে উচ্চারণ করত গণহত্যা "আর কখনও নয়"। জার্মানির আউশভিৎসের ইহুদি গণহত্যার পর থেকে এই শব্দ তিনটি বারবার উচ্চারিত হয়েছে।

কিন্তু আজ ডিজিটাল প্রদর্শনী এবং রাজনৈতিক দায়মুক্তির যুগে "আর কখনও নয়" শব্দ তিনটি ক্লিশে হয়ে গেছে। এতে আর কোনো আবেগ নেই, মূল্যও নেই। ওয়ারশর ঘেটো থেকে স্রেব্রেনিৎসা পর্যন্ত, এবং এখন গাজা পর্যন্তগণহত্যার চিত্র, বিশেষ করে শিশুদের দুর্ভোগউপহাস, কৌতুক এবং বিনোদনের উপকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মিডলইস্ট আই-এ এসাব সারজেগোভিচের লেখা এক মন্তব্য প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অসংবেদনশীলতা যেন তার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। সম্প্রতি ডাচ নেটফ্লিক্স কমেডি ফুটবল প্যারেন্টস-এ এমন একটি দৃশ্য দেখানো হয়েছে, যেখানে স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যার শিকারদের তুলনা আনাড়ি শিশু ফুটবল খেলোয়াড়দের সাথে করা হয়েছে।

১৯৯৫ সালে ডাচ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের তত্ত্বাবধানে ৮ হাজারেরও বেশি বসনীয় মুসলিম পুরুষ ও ছেলেকে হত্যা করা হয়। ডাচ সেনারাও এই গণহত্যায় অংশ নেয়। এখন ডাচ টেলিভিশনে সেই গণহত্যায় নিহতদের উপহাস করা হচ্ছে।

নেদারল্যান্ডস তিনটি বড় গণহত্যার সাথে যুক্তহলোকাস্ট, বসনিয়ান গণহত্যা এবং এখন গাজায় গণহত্যা। বিস্ময়করভাবে ফুটবল প্যারেন্টস সিরিয়ালটিতে শিশুদের ফুটবল দক্ষতাকে গণহত্যার শিকারদের সাথে তুলনা করে উপহাস করা হয়েছে। এখানে ১৯৯৩ সালের ১২ এপ্রিলের একটি ঘটনা তুলে ধরা হয়। ওই দিন স্রেব্রেনিৎসার একটি স্কুল মাঠে ফুটবল খেলার সময় সার্বীয় সেনাদের গুলিতে ৭৪ জন বসনিয়ান শিশু নিহত হয়েছিল।

এ ধরনের রসিকতার প্রবণতা ইসরায়েলিদের মধ্যেও দেখা যায়। ইসরায়েলি টিকটকাররা গাজার ফিলিস্তিনি শিশুদের জন্য অনুদান তোলার ভান করে ভাইরাল "প্র্যাঙ্ক" ভিডিও তৈরি করে, যেখানে প্রকারান্তরে ফিলিস্তিনিদেরই হেয় করা হয়। এই ভিডিওগুলো লাখ লাখ মানুষ দেখেছে। অবিরাম বোমাবর্ষণের শিকার শিশুদের দুর্দশাকে পরিহাসে পরিণত করেছে।

গাজায় গণহত্যা রোধ করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে। একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৫০ লাখ ডাচ নাগরিক হলোকাস্টে অংশ নিয়েছিল। কঠিন সত্য হল, দেশটি কখনই গণহত্যা থেকে দূরে সরে যায়নি। কারণবর্ণবাদ, উপনিবেশ, অমানবিকীকরণ, সামরিকবাদকখনও ভেঙে ফেলা হয়নি, এসব শেষ হয়নি।

পশ্চিমা মিডিয়াতে শিশুদের সব সময়ই একটি নির্দিষ্ট ‘বিনোদন মূল্য রয়েছে। শিশুদের ব্যথা, অশ্রু দর্শকদের প্রভাবিত করে। কিন্তু দুঃখ-কষ্টকে উপস্থাপন করা আর বিনোদন দেওয়ার মধ্যে একটি সূক্ষ্ম রেখা রয়েছে। এবং আজ, সেই রেখাটি কেবল অতিক্রম করা হয়নি, এটি মুছে ফেলা হয়েছে। লাইভ স্ট্রিমিং যুদ্ধ এবং অ্যালগরিদমের যুগে গণহত্যা কেবল একটি অপরাধ নয়, এক ধরনের সন্তুষ্টিও।

টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত প্রথম গণহত্যা ছিল বসনিয়ারটি। আর গাজার গণহত্যা প্রথম সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড গণহত্যা। স্মার্টফোনগুলি এখন শিশুদের জীবনের শেষ মুহূর্তগুলো ধারণ করে। লাইভস্ট্রিমে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া পুরো পরিবারকে দেখানো হয়। পুরো বিশ্ব দেখে। প্রতিকারহীন পরিস্থিতি বুঝিয়ে দেয়, এসব দৃশ্য কাউকে নাড়া দেয় না।

আজকের ক্ষমতা কীভাবে কাজ করে তার একটি বৈশিষ্ট্য এটি। গণহত্যা রোধ করতে ব্যর্থ রাষ্ট্র এবং প্রতিষ্ঠানগুলো এখন তাদের সাংস্কৃতিক শিল্পে গণহত্যার শিকারদের উপহাস করছে। এই অমানবিকীকরণকে টিকিয়ে রেখে নেটফ্লিক্স গণহত্যাকেও তাদের ক্লিক বাড়ানোর একটি উপকরণে পরিণত করেছে। এর শিকড় আরও গভীরে। বাস্তবতা হচ্ছে, পশ্চিমারা কার্যকরভাবে গণহত্যাকে বৈধতা দিয়েছে এবং পুরস্কৃত করেছে। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ, স্রেব্রেনিৎসা এখনও বসনীয়দের হত্যাকারী সার্ব বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করে। গণহত্যার দায়মুক্তি তাদের আজকের অবস্থানে এনে দিয়েছে। তাদের কখনও ক্ষমা চাওয়ার দরকারই হয়নি। ইসরায়েলের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে চলেছে।



banner close
banner close