রবিবার

১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

৮ কোটি মানুষের ভোটাধিকার নিয়ে কেন খেলছে ভারত?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১ জুলাই, ২০২৫ ১৫:২৪

শেয়ার

 ৮ কোটি মানুষের ভোটাধিকার নিয়ে কেন খেলছে ভারত?
ছবি সংগৃহীত

ভারতীয় নির্বাচন কমিশন বা ইসিআই ‘বিদেশি অবৈধ অভিবাসীদের‘ নির্মূলের ধোঁয়া তুলে প্রায় ৮ কোটি ভোটারকে ফের নিবন্ধন করার নির্দেশ দিয়েছে। যে কারণে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দাবিদার দেশটিতে বহু মানুষ ভোটাধিকার হারাবেন বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আশঙ্কা রয়েছে, এদের দেশ থেকেও বের করে দেয়া হতে পারে।

আল জাজিরার এক এক্সপ্লেইনারে জানানো হয়, ইসিআই গত ২৪ জুন ঘোষণা করে, ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় বিহার রাজ্যের প্রায় ৮ কোটি ভোটারকে ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে ভোটার হিসাবে পুনরায় নিবন্ধন করতে হবে। নয়তো ভোটাধিকার হারাবেন। ইসিআই নির্দেশনা অনুসারে, তাদের ‘সন্দেহভাজন বিদেশি নাগরিক হিসাবে চিহ্নিত করা হবে। এমনকি জেল বা নির্বাসনের মুখোমুখিও করা হতে পারেন। বিহারে অক্টোবর বা নভেম্বরে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

সমালোচকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ বিতর্কিত জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন বা এনআরসি বাস্তবায়নের চেষ্টা। ‘অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত করে তাদের নির্বাসনে পাঠানোর জন্য কয়েক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার এ প্রস্তাব দেয়।’

গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই হাজার হাজার বাংলাভাষী মুসলিমকে আটক করছে মোদি প্রশাসন। তাদের অনেককে বাংলাদেশি অভিবাসী হিসেবে পুশইন করা হয়েছে। নতুন করে যাদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেয়া হবে তাদের পরিণতিও একই হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভারতের তৃতীয় জনবহুল রাজ্য বিহার। রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোর মধ্যে এটি একটি। ২০০৫ সাল থেকে বেশিরভাগ সময়ই মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি বিহারে একটি আঞ্চলিক পার্টি জনতা দলের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে ক্ষমতায় রয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, বিধানসভার নির্বাচনের আগে নির্বাচন এই পদক্ষেপ গ্রামাঞ্চলের দরিদ্রতম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভ্রান্তি, আতঙ্ক এবং নথিপত্রের জন্য টানাপোড়েনের সৃষ্টি করেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিহারের জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ তাদের ভোটাধিকারের ন্যায্যতা প্রমাণের জন্য এত অল্প সময়ের মধ্যে নাগরিকত্বের নথিপত্র দিতে পারবে না এবং তাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হবে। ভারতের প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস বিহারে তার জোটসঙ্গী রাষ্ট্রীয় জনতা দলসহ বুধবার রাজ্যে বন্ধের ডাক দেয়। বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধী বিহারের রাজধানী পাটনায় বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন। বিরোধী নেতা এবং নাগরিক সমাজের গোষ্ঠীগুলো এরই মধ্যে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে এই পদক্ষেপ বাতিলের দাবি জানিয়েছে।

ক্ষমতাসীন বিজেপি প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও মায়ানমার থেকে মুসলিম অভিবাসীদের ভারতে ঢূকে পড়ার অভিযোগ করছে দীর্ঘ দিন থেকেই। এখন তারা সারা দেশে ভোটার পুননিবন্ধনের পদক্ষেপটি চালু করতে চায়। আল জাজিরা বিজেপির প্রধান মুখপাত্র এবং মিডিয়া ইনচার্জ অনিল বালুনির সাথে টেক্সট এবং ইমেলের মাধ্যমে দলের মন্তব্য জানতে যোগাযোগ করে। তবে তিনি এর কোনোটিরই জবাব দেননি।

তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক এবং নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এই পদক্ষেপ ভারতীয় গণতন্ত্রের ভবিষ্যত এবং ভোটারদের অধিকারের উপর গভীর প্রভাব ফেলবে। নির্বাচন কমিশনের ২৪শে জুনের ঘোষণায় বলা হয়েছে, এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য কোনো অযোগ্য ভোটারকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করা। এছাড়া ঘন ঘন অভিবাসন, নতুন ভোটার, মৃত ভোটার এবং তালিকায় বিদেশি অবৈধ অভিবাসীদের অন্তর্ভুক্তি‘র মতো কারণ উল্লেখ করা হয়েছে।

ইসিআই অনুসারে, ২০০৩ সালের ভোটার তালিকায় থাকা ভোটারদের কেবল ভোটার নিবন্ধন ফর্ম পুনরায় জমা দিতে হবে। যেখানে পরে যাদের নাম যুক্ত করা হয়েছে, তাদের কখন যুক্ত করা হয়েছে তার উপর নির্ভর করে, তাদের জন্ম তারিখের পাশাপাশি জন্মস্থানের প্রমাণপত্রও জমা দিতে হবে, সাথে তাদের মা-বাবার একজন বা উভয়ের প্রমাণপত্রও জমা দিতে হবে।

নির্বাচন কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা ভারতের পরিচয়পত্র আধার কার্ড বা ইসিআইর ভোটার পরিচয়পত্র গ্রহণ করবে না। তার পরিবর্তে তারা ভোটারদের ১১টি তালিকাভুক্ত নথি জমা দিতে বলেছে - জন্ম সনদ থেকে পাসপোর্ট, বন অধিকার সনদ বা রাজ্য কর্তৃক প্রদত্ত শিক্ষা সনদ চাইছে তারা।

বিহারে, রাজ্যের জনসংখ্যার ১৭ শতাংশ মুসলিম এবং রাজ্যজুড়ে প্রায় এক কোটি ৭৬ লাখ মানুষ এই আইনের আওতায় রয়েছেন। শিক্ষাবিদ অপূর্বানন্দ বলেন, বিহারের ভোটার তালিকা সংশোধন আসলে এনআরসি। সহজ কথায়, যদি তারা ভোট দিতে না পারে, তবে তা বিজেপিকে বিশেষ সুবিধা দেবে।

গত কয়েক মাস ধরে মোদি সরকার ভারতে অবৈধ অভিবাসীদের সনাক্ত করা এবং তাদের নির্বাসনে পাঠানোর চেষ্টা জোরদার করেছে। কমপক্ষে আটটি ভারতীয় রাজ্যে শত শত মুসলমানকে আটক করা হয়েছে। এই অভিযান মূলত বাংলাভাষী মুসলিম অভিবাসীদের বিরুদ্ধে চালানো হচেছ। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ হাজার হাজার এ ধরনের মানুষকে বন্দুকের মুখে বাংলাদেশে ঠেলে দিচ্ছে। কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে তাদের পুশ ইন করার অভিযোগ রয়েছে।



banner close
banner close