ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমানবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় প্রস্তুত। তবে আলোচনায় বসার আগে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের যে ক্ষতি করেছে তার জন্য তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বলে দাবি করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। মর্যাদা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা পুনরায় শুরু করতে ইরান প্রস্তুত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বিখ্যাত ফরাসি সংবাদপত্র লা মঁদে-কে দেয়া সাক্ষাৎকারে আরাঘচি জোর দিয়ে বলেন, ‘যুক্তরাট্রকে প্রথমে আচরণ পরিবর্তন করতে হবে। আলোচনার সময় ইরানের বিরুদ্ধে আর সামরিক হামলা চালানো হবে না তার নিশ্চয়তা দিতে হবে।’
তিনি জোর দিয়ে আবারো বলেন, ‘ইরান সব সময় মর্যাদা, যুক্তি এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। একটি বন্ধু রাষ্ট্র কূটনৈতিক হটলাইন স্থাপনে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছে।’
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কূটনীতি একটি দ্বিমুখী রাস্তা। যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা ভেঙে সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছে। কাজেই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তার ভুলের দায় স্বীকার করা এবং আচরণে পরিবর্তন আনা জরুরি। তেহরানের এই নিশ্চয়তা প্রয়োজন যে ভবিষ্যতের যেকোনো আলোচনার সময় যুক্তরাষ্ট্র সামরিক হামলা থেকে বিরত থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘মার্কিন হামলার ফলে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করার পর তেহরানের ক্ষতিপূরণ চাওয়ার অধিকার আছে। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ’র নিরন্তর তত্ত্বাবধানে এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে পরিচালিত একটি কর্মসূচি কেবল ভৌত কাঠামোর চেয়ে আরও অনেক বেশি কিছু। জ্ঞানের শীর্ষে পৌঁছেছে এমন একটি জাতির অদম্য ইচ্ছাশক্তি সহজে নষ্ট হয় না। আইএইএ’র প্রতিবেদনগুলো ধারাবাহিকভাবে নিশ্চিত করেছে, ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচিতে অস্ত্র তৈরির কোনো প্রমাণ নেই।’
তিনি উল্লেখ করেন, আইএইএ রদ্বারা তত্ত্বাবধানে থাকা পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা এবং পশ্চিমা দেশগুলোর এই হামলার নিন্দা জানাতে ব্যর্থতা আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তির উপরই আক্রমণ। আরাগচি জোর দিয়ে বলেন, নতুন করে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের সঙ্গে করা ভুল আচরণের দায় স্বীকার করতে হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন আরও নিষেধাজ্ঞা বা সামরিক হুমকি কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করবে।
তিনি ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তিতে বর্ণিত নিষেধাজ্ঞা ব্যবস্থা সক্রিয়করণ সম্পর্কে তিনটি ইউরোপীয় দেশের পরামর্শের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এই ধরনের পদক্ষেপ সামরিক আক্রমণের সমতুল্য হবে এবং মূলত ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কিত আলোচনায় ইউরোপের ভূমিকাকে নাকচ করে দেবে।’
গত ১৩ জুন ইসরায়েল হঠাৎ করেই ইরানের ওপর হামলা চালায়। এতে ইরানের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কমান্ডার এবং পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। এরপর ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের সনদ এবং এনপিটি লঙ্ঘন করে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আগ্রাসন যুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেয়। ২৪ জুন ইসরায়েল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয়।
আরও পড়ুন:








