ভারতের বিহার রাজ্যের পূর্ণিয়া জেলায় কুসংস্কার ও ‘ডাইনি’ অপবাদের জেরে একই পরিবারের পাঁচ সদস্যকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে তিনজন নারী ও দুজন পুরুষ রয়েছেন। এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে রাজ রানিগঞ্জ পঞ্চায়েতের টেটগামা গ্রামে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রোববার রাতে গ্রামের কয়েকশ জন উত্তেজিত মানুষ লাঠি-সোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে চড়াও হয় বাবুলাল ওঁরাও নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে। ডাইনি বিদ্যার চর্চার অপবাদে তাঁকে, তাঁর স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধূ এবং বৃদ্ধা মাকে নির্মমভাবে পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।
নিহতরা হলেন—বাবুলাল ওঁরাও (৬৫), স্ত্রী সীতা দেবী (৬০), মা কাতো দেবী (৭৫), ছেলে মনজিৎ ওঁরাও (২৫) এবং পুত্রবধূ রেখা দেবী (২২)। ঘটনার সময় বাবুলালের ছোট ছেলে (১৭) কোনোমতে পালিয়ে গিয়ে থানায় খবর দিলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। পুলিশ ডগ স্কোয়াডসহ অভিযান চালিয়ে তিন কিলোমিটার দূরের একটি জলাশয় থেকে পাঁচটি দগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করে।
পুলিশ জানায়, গ্রামবাসীরা হত্যা করে লাশ বস্তাবন্দি করে ট্র্যাক্টরে তুলে ওই জলাশয়ে ফেলে দেয়। ইতোমধ্যে নকুল ওঁরাও, ছোটু ওঁরাও এবং ট্র্যাক্টরের মালিক সানাউলসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও দেড়-দুই শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, শিশুমৃত্যু ও অসুস্থতার জন্য বাবুলাল ওঁরাওয়ের পরিবারের সদস্যদের দায়ী করে গ্রামের মানুষ। এমনকি এ পরিবারকে এক দশক আগেও ডাইনি অপবাদে হেনস্তা করা হয়েছিল।
স্থানীয় সমাজকর্মীদের মতে, ওঁরাও সম্প্রদায়ের এই গ্রামে শিক্ষার অভাব চরম। অসুস্থ হলে প্রথমে হাসপাতালে নয়, নেয়া হয় ওঝার কাছে। আর্থসামাজিকভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ও প্রতিহিংসার জেরে এমন গণহত্যা ঘটতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
পূর্বে ‘ডাইনি’ বিরোধী আইন থাকলেও (বিহারে ১৯৯৯ সালে) বাস্তবায়নের অভাবে এমন অমানবিক ঘটনাগুলো ঘটেই চলেছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর ২০২২ সালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ওই বছর সারা ভারতে ‘ডাইনি’ অপবাদে ৮৫ জনকে হত্যা করা হয়।
বর্তমানে পুরো গ্রাম জনশূন্য। নিহতদের আত্মীয়রা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তদন্তের স্বার্থে গঠন করা হয়েছে বিশেষ তদন্ত দল (SIT)। প্রশাসনের দাবি, নাবালক সাক্ষীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
এ ঘটনা নতুন করে কুসংস্কার, আইনশৃঙ্খলা ও সমাজচেতনার সংকটকে সামনে এনেছে—যেখানে শুধু আইন নয়, প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী শিক্ষাগত ও সামাজিক সংস্কার।
আরও পড়ুন:








