আফগানিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাসীদের সাম্প্রতিক হামলার পর পাকিস্তান আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি সন্ত্রাসের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হচ্ছে। জাতিসংঘের কাছে এ আশঙ্কা প্রকাশ করে ইসলামাবাদ। একই সঙ্গে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান বা টিটিপি-কে একটি বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক হুমকি হিসেবেও অভিহিত করেছে তারা।
জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী রাষ্ট্রদূত আসিম ইফতিখার আহমেদ আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ভাষণ দেয়ার সময় বলেন, নিশ্চিত করতে হবে, আফগানিস্তান যেন সন্ত্রাসীদের আবাসস্থলে পরিণত না হয়। আফগানিস্তান শুধু পাকিস্তানের প্রতিবেশীই নয়, বরং অঞ্চল এবং তার বাইরেও হুমকিস্বরূপ।
এর আগেও বহুবার পাকিস্তান এ ধরনের সতর্কতা উচ্চারণ করেছে। গত সপ্তাহে খাইবার-পাখতুনখোয়ার উত্তর ওয়াজিরিস্তান জেলায় পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টার সময় কমপক্ষে ৩০ সন্ত্রাসী নিরাপত্তা বাহিনীর হামলায় নিহত হয়। পাকিস্তানের দাবি, এসব সন্ত্রাসীকে ভারত সহায়তা করে।
২০২১ সালে তালেবান আফগানিস্তানে ফিরে আসার পর থেকে পাকিস্তানে সীমান্তবর্তী সন্ত্রাসের ঘটনা বাড়ছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তান প্রদেশে।
একদিন আগে পাকিস্তান-আফগানিস্তান ইসলামাবাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের বৈঠকে মিলিত হয়। সেখানে বাণিজ্য ও পরিবহন সহযোগিতা, নিরাপত্তা এবং সংযোগসহ দ্বিপাক্ষিক স্বার্থের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়। দু’পক্ষই সন্ত্রাসকে আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি হিসেবে মেনে নেয়।
বৈঠকের সময়, পাকিস্তানি পক্ষ আফগান মাটিতে সক্রিয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়। তাদের অভিযোগ, এই ধরনের গোষ্ঠী পাকিস্তানের নিরাপত্তাকে দুর্বল এবং আঞ্চলিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে।
জাতিসংঘে ইফতিখার বলেন, আফগানিস্তান থেকে উদ্ভূত সন্ত্রাসবাদ প্রতিবেশী দেশগুলির জন্য, বিশেষ করে পাকিস্তানের জন্য একটি গুরুতর হুমকি। আফগানিস্তানে আল-কায়েদা, টিটিপি এবং বেলুচ জঙ্গি গোষ্ঠীসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী সংগঠন এখনও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আফগানিস্তানকে অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত করা উচিত নয়।
তিনি আরো অভিযোগ করেন, ‘ছয় হাজার যোদ্ধা নিয়ে টিটিপি আফগান মাটি থেকে পরিচালিত জাতিসংঘ-নির্ধারিত বৃহত্তম সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। টিটিপি কেবল পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তার জন্যই নয়, বরং অঞ্চল এবং বিশ্বের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
আফগানিস্তানের সমস্যা সরাসরি পাকিস্তানকে প্রভাবিত করছে অভিযোগ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘পাকিস্তান কয়েক দশক ধরে লাখ লাখ আফগানকে আশ্রয় দিয়েছে। ২০২১ সালের আগস্ট থেকে আরও ১০ লাখ অবৈধ আফগান পাকিস্তানে প্রবেশ করে। যা অন্যান্য সমস্যার মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ তৈরি করেছে। পাকিস্তান চায়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই বোঝা আরও ন্যায়সঙ্গতভাবে ভাগ করে নেবে।’
আরও পড়ুন:








