প্রায় এক দশক ধরে সার্ক অকার্যকর। পাকিস্তানের সাথে যোগাযোগ রাখতে ভারতের অনীহা এবং একগুঁয়েমির শিকার এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। ২০১৬ সালে ইসলামাবাদ শীর্ষ সম্মেলন বয়কট করে দিল্লি। আরও কয়েকটি দেশ দিল্লির সিদ্ধান্ত অনুসরণ করার পর জোটটি অকার্যকর হয়ে পড়ে।
কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার বিশাল সম্ভাবনাকে ভারতের কাছে চিরতরে জিম্মি করে রাখা যাবে না। সম্ভবত এই কারণেই পাকিস্তান, চীন ও বাংলাদেশ একটি নতুন আঞ্চলিক ব্লক গঠনের সম্ভাবনা নিজে কাজ শুরু করেছে। এ সম্পর্কিত সার্ম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলি ভারতসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলে যথেষ্ট উত্তেজনা তৈরি করেছে। যেখানে পর্যবেক্ষকরা অনুমান করছেন, এই তিন দেশ ভারত ছাড়া একটি প্লাটফর্ম গঠনের কথা ভাবছে।
পাকিস্তানের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক ডনের এক খবরে বলা হয়, ইসলামাবাদ অবশ্য এখনো সার্কের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পাকিস্তান ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা এখনো অন্তর্ভুক্তিমূলক আঞ্চলিকতায় বিশ্বাস করে। কূটনৈতিকভাবে, এটি ভারতের কোর্টে বল ঠেলে দেয়া। এখন নয়াদিল্লির উপর নির্ভর করছে, তারা ফোরামটিকে পুনরুজ্জীবিত করবে নাকি তার একগুঁয়েমির কারণে এই অঞ্চলিক জোটটিকে খণ্ডিত হতে দেবে। ভারতের এই একগুঁয়েমি দক্ষিণ এশিয়ার অব্যবহৃত সম্ভাবনা উন্মোচনের পথকে গত কয়েক বছর ধরেই বন্ধ করে রেখেছে। এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির জন্য সার্ক একটি প্রতিশ্রুতিশীল প্ল্যাটফর্ম হতে পারত। কিন্তু এটি আসিয়ানের মতো সফল হয়নি।
সার্কের সনদ অনুসারে, সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান পর্যায়ের শীর্ষ সম্মেলনে সব সদস্য রাষ্ট্রের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক। ২০১৬ সালে ইসলামাবাদ শীর্ষ সম্মেলন বয়কট করার সময় ভারত এই সুযোগটি কাজে লাগায়।
সম্ভবত নয়াদিল্লিকে মনে করিয়ে দেয়া উচিত, ১৯৯০-এর দশকে এমন একটি সময় ছিল যখন পাকিস্তান ২০১৬ সালে যা করেছিল তা করতে পারত। কিন্তু সে সময় তারা বিচক্ষণতার পরিচয় দেয়। ১৯৯৫ সালে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে থাকাকালীন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো নয়াদিল্লিতে অষ্টম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে চাননি। তার পরিবর্তে ওই সময়ের প্রেসিডেন্ট ফারুক লেঘারিকে পাঠানো হয়েছিল, যা জোটের প্রতি ইসলামাবাদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধতার প্রতিফলন ঘটায়।
আজ, পাকিস্তান সার্কের প্রতি তার মনোভাব পুনর্ব্যক্ত করছে। দারিদ্র্য, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বাণিজ্য বাধার মতো সাধারণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক জোট হতে পারে। ভারত যদি অব্যাহতভাবে এ ধরনের মনোভাব দেখায় এবং অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করে, তাহলে তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করা উচিত। বিশ্ব অর্থনীতিতে যখন অস্থিরতা চলছে এবং ক্রমহ্রাসমান সম্পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব তীব্র হচ্ছে, তখন এই জোট সদস্য দেশগুলোকে শক্ত ভিত দিতে পারে। ভারত থাকুক বা না থাকুক, দক্ষিণ এশিয়াকে এগিয়ে যেতে হবে।
আরও পড়ুন:








