ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোতে শুরু হয়েছে ব্রিকস জোটের সর্বশেষ শীর্ষ সম্মেলন। বিশ্বব্যবস্থায় পশ্চিমা আধিপত্যের বিকল্প শক্তি হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে চাইলেও এবারের সম্মেলনে অনুপস্থিত থাকছেন জোটের দুই প্রভাবশালী নেতা—চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
রোববার শুরু হওয়া এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন জোটভুক্ত দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা। তবে শি জিনপিংয়ের পরিবর্তে চীনের প্রতিনিধিত্ব করছেন প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াং। অন্যদিকে পুতিন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ঝুঁকি এড়াতে সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন না।
২০০৯ সালে গঠিত ব্রিকসের নাম এসেছে এর প্রাথমিক পাঁচ সদস্য—ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার নামের আদ্যক্ষর থেকে। সম্প্রতি মিশর, ইথিওপিয়া, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত জোটে যুক্ত হওয়ায় এর সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০-এ। কৌশলগত অংশীদার হিসেবে আছে আরও অন্তত ১০টি দেশ, যার মধ্যে রয়েছে কিউবা, বেলারুশ ও ভিয়েতনাম।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শি ও পুতিনের অনুপস্থিতি ব্রিকসের ঐক্য, নেতৃত্ব ও বৈশ্বিক প্রভাব নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলছে।
সম্মেলনে আলোচ্যসূচির মধ্যে রয়েছে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎ ও গ্লোবাল সাউথের বাণিজ্যিক অবস্থান। ট্রাম্প প্রশাসনের ‘বাছবিচারহীন’ শুল্কনীতিকে বৈশ্বিক বাণিজ্যের জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে একজোট হয়ে প্রতিবাদ জানানোর পরিকল্পনাও রয়েছে নেতাদের।
তবে গাজা ও ইরান ইস্যুতে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। এক পক্ষ দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার পক্ষে থাকলেও, অন্যরা তা এড়িয়ে যেতে চাইছে—এমনটি জানিয়েছে সম্মেলন সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র, যা পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক।
সম্মেলনে ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ও মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি’র উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে।
আল-জাজিরার বিশ্লেষক লুসিয়া নিউম্যানের মতে, ব্রিকস এখনো একটি সুসংগঠিত বা ঐক্যবদ্ধ জোট নয়। রাজনৈতিক বিভাজন ও স্বার্থবিরোধ থাকায় এর বৈশ্বিক কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ।
বর্তমানে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা, মোট ভূখণ্ডের ৩৬ শতাংশ এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির এক-চতুর্থাংশের প্রতিনিধিত্ব দাবি করলেও, ব্রিকসের প্রকৃত শক্তি নির্ভর করছে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ভবিষ্যতের অভ্যন্তরীণ সমন্বয় ও ঐকমত্যের ওপর।
আরও পড়ুন:








