মঙ্গলবার

১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ০ পৌষ, ১৪৩২

এবার ত্রাণের নামে ফিলিস্তিনি নিধন

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ৬ জুলাই, ২০২৫ ০৯:৩৯

শেয়ার

এবার ত্রাণের নামে ফিলিস্তিনি নিধন
ছবি: সংগৃহীত

গাজায় গত কয়েক সপ্তাহে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত ত্রাণ কেন্দ্র থেকে খাবার নিতে গিয়ে সাত শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে এ তথ্য।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শনিবার জানিয়েছে, গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন বা জিএইচএফ বিতরণ কেন্দ্রগুলিতে সহায়তা চাইতে গিয়ে কমপক্ষে ৭৪৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪ হাজার ৮৯১ জনেরও বেশি আহত হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলো ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র পরিচালনা করে।

মে মাসের শেষের দিকে বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ফিলিস্তিনি উপত্যকাটিতে কার্যক্রম শুরু করে জিএইচএফ। এই কেন্দ্রগুলোতেই ইসরায়েলি বাহিনী সাহায্যপ্রার্থীদের উপর গুলি চালায়, এমন একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে ফাউন্ডেশনটি।

গাজা শহর থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানান, ইসরায়েলের গাজা অবরোধের ফলে সৃষ্ট তীব্র খাদ্য ঘাটতির মধ্যে ফিলিস্তিনি পরিবারগুলো মরিয়া হয়ে সাহায্যকেন্দ্রগুলো দিকে ছুটে যায়। ওই সময়ই গুলি ছুড়তে শুরু করে ইসরায়েলি সেনারা।

তিনি বলেন, ‘মানুষ ক্ষুধার্ত। অনেক পরিবার খাবার খুবই কম পাচ্ছে বা একেবারেই পাচ্ছে না। এ সব পরিবারের মায়েরা তাদের সন্তানদের খাওয়াতে না খেয়ে থাকছেন।’

এই সপ্তাহের শুরুতে সংবাদ সংস্থা এপির একটি প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের ঠিকাদারদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, জিএইচএফ বিতরণ কেন্দ্রে সাহায্য চাইতে যাওয়া ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের উপর তাজা গুলি ও স্টান গ্রেনেড ছোঁড়া হয়েছে। নাম প্রকাশ না করা দুই মার্কিন ঠিকাদার এপিকে জানিয়েছেন, ভারী অস্ত্রধারী কর্মীরা যা ইচ্ছা তাই করছেন।

জিএইচএফ এপির প্রতিবেদনকে স্পষ্টতই মিথ্যা বলে অস্বীকার করেছে এবং বলেছে, তারা কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা ও সুরক্ষাকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নেয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনও জিএইচএফের বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। বুধবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেছেন, এই গ্রুপটিই একমাত্র প্রতিষ্ঠান যারা গাজা উপত্যকায় খাদ্য ও সাহায্য পৌঁছে দিচ্ছে। জুনের শেষের দিকে, ট্রাম্প প্রশাসন সংগঠনটির জন্য ৩০ মিলিয়ন ডলার সরাসরি তহবিলের প্রতিশ্রুতি দেয়।

শনিবার জিএইচএফ জানায়, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে তাদের একটি কেন্দ্রে খাদ্য বিতরণ শেষে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যাক্তির গ্রেনেড নিক্ষেপে দুই মার্কিন কর্মী আহত হয়েছেন। গ্রুপটি জানিয়েছে, আহত আমেরিকানরা চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং তাদের অবস্থা স্থিতিশীল। এই হামলার জন্য কে দায়ী তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়।

নেতৃস্থানীয় মানবিক ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো জিএইচএফের কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানিয়েছে। ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে তারা ২০ লাখ মানুষকে জনাকীর্ণ, সামরিকীকরণ অঞ্চলে জোর করে পাঠানোর অভিযোগ করেছে। যেখানে তাদের জানমানের কোনো নিরাপত্তা নেই। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই গ্রুপের কার্যক্রমকে ‘অমানবিক এবং মারাত্মক সামরিকীকরণ পরিকল্পনা হিসাবে বর্ণনা করেছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে পাওয়া প্রমাণ থেকে বোঝা যায়, জিএইচএফ আন্তর্জাতিক উদ্বেগকে শান্ত করার জন্য তৈরি করা হলেও এটি ইসরায়েলের গণহত্যার আরেকটি হাতিয়ার মাত্র। ইসরায়েলের অবরোধের কারণে খাদ্য, পানি এবং অন্যান্য মানবিক সরবরাহের তীব্র ঘাটতির মুখোমুখি হয়ে, গাজার অনেক ফিলিস্তিনি বলেছেন যে, ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তাদের কাছে এই গোষ্ঠীর কাছ থেকে সাহায্য চাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

জিএইচএফ সাইটে হামলায় আহত একজন ফিলিস্তিনি মাজিদ আবু লাবান আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমি সাহায্য বিতরণ কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম কারণ আমার বাচ্চারা টানা তিন দিন ধরে কিছু খায়নি। আমরা যে কোনো উপায়ে আমাদের বাচ্চাদের বোকা বানানোর চেষ্টা করি, কিন্তু তারা ক্ষুধার্ত। তাই আমি আমার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাহায্য বিতরণ কেন্দ্র নেতজারিমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। আমি খাবারের আশায় মধ্যরাতে রাস্তা ধারে গিয়ে দাঁড়াই। আমার মতো আরও অনেকে ছিল। ভিড় বাড়তে শুরু করলে ইসরায়েলি বাহিনী আমাদের দিকে কামানের গোলা ছোড়ে।’



banner close
banner close