গত প্রায় দুই বছর ধরে গাজার নিরস্ত্র মানুষদের ওপর ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। শুধু গাজাই নয়, ইসরায়েল এখন হামলা চালাচ্ছে দক্ষিণ লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন ও এমনকি ইরানেও। ইরানে সাম্প্রতিক হামলায় ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িত ছিল। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেও পশ্চিমা দেশগুলো নির্লজ্জভাবে এই হামলাগুলোকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।
পশ্চিমা নেতারা বহুদিন ধরে এক নতুন মধ্যপ্রাচ্য গড়ার স্বপ্ন দেখিয়ে আসছেন। তারা ভাবেন, এটি যেনো চূড়ান্ত কোনো সত্য। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। মধ্যপ্রাচ্য এমন এক অঞ্চল, যেখানে প্রতিটি দশকে নতুন সংকট ও পরিবর্তনের মুখোমুখি হতে হয়। এ অঞ্চল বারবার নিজেকে নতুনভাবে গড়ে তোলে।
তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী এবং জাফা সিটি কাউন্সিলের সদস্য আবেদ আবু শাহদেহ্ সম্প্রতি মিডল ইস্ট আই এ এক বিশ্লেষণে বলেছেন, এখন সময় এসেছে আরব বিশ্বকে নিজস্ব স্বার্থকে সামনে রেখে নতুন আঞ্চলিক কাঠামো তৈরিতে মনোযোগী হওয়ার।
আবেদ আবু ইতিহাসবিদ ফ্রান্সিস ফুকোয়ামার একটি বক্তব্য স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ইতিহাসের সমাপ্তি হয় না। এ কথার প্রমাণ আজকের বৈশ্বিক পরিস্থিতি।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ফুকোয়ামা বলেছিলেন, উদার গণতন্ত্র ও পুঁজিবাদের বিজয়ের মাধ্যমে ইতিহাস শেষ হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। রাশিয়া আবার সামরিক শক্তি হয়ে উঠেছে, চীন আত্মবিশ্বাসী বিশ্বশক্তি হিসেবে দাড়িয়েছে। আর গণতন্ত্র নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে লড়াই করছে।
বর্তমানে ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতকে কেন্দ্র করে আবার নতুন মধ্যপ্রাচ্য এর ধারণা সামনে এসেছে। দাবি করা হচ্ছে, ইরান-সমর্থিত প্রতিরোধ অক্ষ দুর্বল হয়ে গেছে। কিন্তু ইতিহাস বলছে, এমন দাবি নতুন নয়। অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর থেকেই প্রতিটি যুদ্ধের পর বলা হয়েছে, এখন নতুন যুগ শুরু হবে। কিন্তু প্রতিটি যুদ্ধই আরও বড় সংঘাতের জন্ম দিয়েছে।
১৯৬৭ সালের ছয়দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল আরবদের পরাজিত করলেও পরে ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশন শক্তি পেয়েছে। ১৯৮২ সালে লেবাননে সামরিক বিজয়ের পর হিজবুল্লাহর মতো সংগঠন জন্ম নিয়েছে, যা এখনো ইসরায়েলের জন্য বড় হুমকি।
আরব দেশগুলো যেমন নিজেদের শক্তি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেনি, তেমনি ইসরায়েলও আরবদের সম্ভাবনা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে।
আরব বসন্তের সময় গণতন্ত্রের দিকে এগোনো মিশরকে ঠেকাতে ইসরায়েল বড় ভূমিকা রেখেছিল। কারণ মিশরীয় জনগণ ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তি মানতে রাজি নয়। এজন্য ইসরায়েল ২০১৩ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সিসি সরকারকে বৈধতা দিতে যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দিয়েছিল।
আজকের নতুন মধ্যপ্রাচ্য এর কল্পনা একধরনের মায়া। এর বাস্তবায়ন আরব শাসকদের ওপর নির্ভর করছে, যাদের অনেকেই এই ধারণা গ্রহণ করতে প্রস্তুত নন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা থেকে হামাস ইসরায়েলে ঢুকে আক্রমণ করার পরই সেই কল্পনার পর্দা নামতে শুরু করে। ওই সময় সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে যাচ্ছিল, কিন্তু গাজার পরিস্থিতি সেই আলোচনা থামিয়ে দেয়।
পরবর্তী সময়ে ইরানেও ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র মিলে পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়, যা পুরো অঞ্চলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই হামলা আবারও দেখিয়ে দিয়েছে, পশ্চিমারা কেবল নিজেদের স্বার্থে আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগ করে।
আরও পড়ুন:








