গাজা ধ্বংসে হিরোশিমায় ফেলা পারমাণবিক বোমার চেয়ে ছয়গুণ বেশি শক্তিশালী বিস্ফোরক ব্যবহার করেছে ইসরায়েল—এমন বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিন বিষয়ক বিশেষ দূত ফ্রান্সেসকা আলবানিজ।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশনে গাজা পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি জানান, গত কয়েক মাসে গাজায় ইসরায়েল ৮৫ হাজার টনেরও বেশি বিস্ফোরক ফেলেছে, যা আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম নিষ্ঠুর গণহত্যার উদাহরণ।
আলবানিজ বলেন, “এই বিপুল বিস্ফোরক নিক্ষেপের মাধ্যমে অস্ত্র প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো রেকর্ড পরিমাণ মুনাফা করেছে। তেল আবিব স্টক এক্সচেঞ্জে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২১৩ শতাংশ মুনাফা বেড়েছে, যা যুদ্ধকে একদিকে মানবিক বিপর্যয়, অন্যদিকে বাণিজ্যিক উৎসবে পরিণত করেছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, ইসরায়েল গাজাকে ‘সামরিক পরীক্ষাগার’ হিসেবে ব্যবহার করছে। নতুন অস্ত্র, নজরদারি প্রযুক্তি, ড্রোন ও রাডার সিস্টেম বাস্তব পরিস্থিতিতে পরীক্ষা করা হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের ওপর।
নিহত ও আহতের সংখ্যা ভয়াবহ মাত্রায়
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৫৭ হাজার ১৩০ জন নিহত ও ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯২ জন আহত হয়েছেন। শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ গেছে অন্তত ১১৮ জনের এবং আহত হয়েছেন ৫৮১ জন। নিহতদের মধ্যে ১২ জন যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সমর্থিত ত্রাণকেন্দ্রে যাওয়া ত্রাণপ্রার্থীও রয়েছেন।
২৭ মে থেকে এ পর্যন্ত ৬৫২ জন ত্রাণপ্রার্থী ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন।
‘দখলদারিত্বের অর্থনীতি’ চালাচ্ছে করপোরেট জগত
ফ্রান্সেসকা আলবানিজ আরও জানান, অন্তত ৪৮টি আন্তর্জাতিক করপোরেট প্রতিষ্ঠান—including অস্ত্র প্রস্তুতকারক, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও বিশ্ববিদ্যালয়—ইসরায়েলের দখলদার কার্যক্রমে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত।
তিনি বলেন, “এই করপোরেট অংশীদারিত্ব ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধকে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করছে।”
পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা ও বাণিজ্য স্থগিতের আহ্বান
জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ইসরায়েলের ওপর পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা, সকল বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক স্থগিত করা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতের আহ্বান জানান আলবানিজ।
তিনি বলেন, “শুধু অজ্ঞতা কিংবা আদর্শগত বিভ্রান্তি নয়, আজ গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে যে নিস্ক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে, তা আর গ্রহণযোগ্য নয়। এই গণহত্যা এতটাই দৃশ্যমান, এতটাই সরাসরি সম্প্রচারিত যে চুপ থাকা মানেই অংশীদার হওয়া।”
বক্তব্যের শেষদিকে তিনি নাগরিক সমাজ, আইনজীবী, ট্রেড ইউনিয়নসহ সবাইকে মানবতা রক্ষায় সরব হওয়ার আহ্বান জানান।
সূত্র: আলজাজিরা
আরও পড়ুন:








